সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা করা জরুরি

অস্বাভাবিক সহিংসতা
প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও মানুষ সহিংসতার শিকার হচ্ছে। হত্যাকা-, গণপিটুনি, রাজনৈতিক সহিংসতা ও নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা বাড়ছেই। এসব ঘটনা প্রমাণ করে, দেশে সহিংসতা এখন সামাজিক ও রাজনৈতিক উভয় পরিসরেই অস্বাভাবিক মাত্রা পেয়েছে। এসব আমাদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সামাজিক মূল্যবোধের গভীর সংকটের এক সুস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি; যেখানে রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা শহর, রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ- কোথাও কেউই নিরাপদ নয়। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনাখুনি হচ্ছে। মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতা চরমে পৌঁছেছে। এমনকি ঢাকা ও নাটোরে ছিনতাইকারী বা চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার মতো বর্বরোচিত ঘটনাও ঘটছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্ট মাসে গণপিটুনিতে মৃতের সংখ্যা জুলাইয়ের তুলনায় অনেক বেশি, যা প্রমাণ করে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আমাদের সমাজ ও প্রশাসন উভয়ই ব্যর্থ হচ্ছে। অন্যদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকরাও চরম ঝুঁকির মধ্যে আছেন। আগস্ট মাসে ৯৬ জন সাংবাদিক হামলা, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার চিত্র আরো উদ্বেগজনক। আগস্টে অন্তত ৩৪৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে বহু শিশু ও কিশোরী। এমনকি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার মতো ঘটনা বেড়ে চলেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও কারাগারে মৃত্যুর ঘটনাও কম নয়। সব মিলিয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সক্ষমতা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠছে। এখন জরুরি হলো কঠোর আইন প্রয়োগ এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। একই সঙ্গে সমাজে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে কেউ নিজের হাতে বিচার তুলে না নেয়। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে পরিচিত। এই সহিংসতার প্রবণতা চলতে থাকলে নাগরিক নিরাপত্তা ভেঙে পড়বে এবং উন্নয়নযাত্রা হুমকির মুখে পড়বে। তাই এখনই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সর্বস্তরের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া সময়ের দাবি।