সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গা সংকট-সহায়তা নয়, টেকসই সমাধান এখন জরুরি

আট বছর আগে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বোঝা বাংলাদেশ এখনো বহন করছে। বর্তমানে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। ২০১৭ সালে প্রত্যাবাসন চুক্তি হলেও একজনও ফেরত যায়নি। বরং রাখাইনের পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। একদিকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বাস্তব সুযোগ নেই, অন্যদিকে সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহায়তাও দিন দিন কমছে। চলতি বছর প্রয়োজন ছিল ৯৩ কোটি ডলারের বেশি, কিন্তু ৩৫ শতাংশ অর্থের জোগান মিলেছে। ২০১৮ সালে যেখানে ৭০ শতাংশের বেশি সহায়তা মিলত, এখন তা প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। বিশ^ব্যাপী সংঘাত ও অস্থিরতার কারণে দাতা দেশগুলোর মনোযোগ সরে গেছে, অথচ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জীবনমান অবনতির দিকে যাচ্ছে। খাদ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষায় কাটছাঁটের ফলে শিবিরে ক্ষুধা, অপুষ্টি এবং অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। এই সংকট নিছক মানবিক বিষয় নয়, এটি রাজনৈতিক। মিয়ানমারে সামরিক জান্তার অব্যাহত দমননীতি ও রাখাইনে সহিংসতা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথ বন্ধ করে রেখেছে। আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমারের সেনাশাসকদের দায়মুক্তি ভোগের সুযোগ দিচ্ছে, যার ফলে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও বাস্তব ফল এখনো আসেনি। বাংলাদেশ এককভাবে এই সংকট বহন করতে পারে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত সহায়তা কমানো নয়, বরং তা বাড়ানো। একই সঙ্গে মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব ও সমঅধিকার নিশ্চিত হয়। রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনই একমাত্র টেকসই সমাধান। রোহিঙ্গা ঢলের আট বছর পর প্রশ্ন জাগে-এই দুর্দশার শেষ কোথায়? মানবিক সহায়তা জরুরি, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। এখন আন্তর্জাতিক সমাজকে দ্ব্যর্থহীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে-রোহিঙ্গাদের সংকটের স্থায়ী সমাধান হবে, নাকি এই অমানবিক বাস্তবতা চলতেই থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button