সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুফল নিশ্চিত হোক

অনিয়ম-দুর্নীতি
নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ এ কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে দেশে দারিদ্র্যের হার কমানো যেত। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ৫০ শতাংশই ভূতুড়ে উপকারভোগী। তারা প্রকৃত গরিব না হলেও হয় ভূতুড়ে, না হয় রাজনৈতিক উপকারভোগী। এ সমস্যা নিয়ে অতীতে অনেক আলোচনা হলেও এর সমাধান না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। যেসব কারণে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়নি, তা চিহ্নিত করে উত্তরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে জাতীয় পর্যায়ে একটি জনসংখ্যা রেজিস্টার তৈরির কাজ চলছে। এটি হলে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই জানা যাবে কারা দরিদ্র এবং কোন পর্যায়ের দরিদ্র। ন্যায্যতাভিত্তিক সমাজে চরম দারিদ্র্য থাকতে পারে না। এ সমস্যার সমাধানে ধারাবাহিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। জানা যায়, বর্তমান সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির একটি রোডম্যাপ নিয়ে কাজ করছে। সরকারের এ কাজের ধারাবাহিকতা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে অব্যাহত রাখতে হবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসির সাম্প্রতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বেড়েছে অতিদারিদ্র্যের হারও। উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে দেশে দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্যের হার বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এ কর্মসূচির অর্থ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে বহু মানুষ দারিদ্র্যের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে বেশি সক্ষমতা নিয়ে উৎপাদনমুখী কর্মকা-ে যুক্ত হতে পারবে, যা দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরও গতিশীল করবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে আয়-দারিদ্র্যের চেয়ে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার বেশি। কাজেই দেশের বহুমাত্রিক দারিদ্র্য কমাতেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রবৃদ্ধিচালিত নীতিমালার পাশাপাশি সামাজিক সেবা বৃদ্ধির কৌশলের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। দেশে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য হ্রাসে শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে যাতে কোনো অনিয়ম না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দেশে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।