সম্পাদকীয়

বিশ^বিদ্যালয়ে বৈষম্যের অবসান হোক

বৈষম্যের আভিধানিক সংজ্ঞা হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি অন্যায়ভাবে আচরণ করা বা ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা না প্রদান করা। এটি সাধারণত বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ, সামাজিক অবস্থা, আর্থিক সামর্থ্য, ভাষা বা অন্য কোনো কারণে করা হয়। বৈষম্যের মাধ্যমে একদল মানুষকে অন্যদের তুলনায় প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয় বা তাদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়। এই বৈষম্যের একটা ছোট্ট অংশ ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাধ্যমে ১ শতাংশের কম জনগোষ্ঠীর জন্য ৩০ শতাংশ সুবিধা দেয়া, যা নিতে ঐ এক শতাংশের অনেকেই রাজি ছিলেন না। এই বৈষম্যমূলক আচরণের বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসভিত্তিক প্রতিবাদ দেশের সরকার পতনের বীজ বপন করেছিল। অথচ, বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে এমন হাজারো বৈষম্যের বীজ বপন করা আছে, যা নিরবে-নিভৃতে এই জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনাকে ক্ষতবিক্ষত করছে প্রতিনিয়ত! এই বৈষম্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়, যার আঁতুড়ঘর ঐ বিশ^বিদ্যালয়গুলো নিজেরাই। বিশ^বিদ্যালয়পড়–য়া প্রতি ১০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৪২ জনকেই নানা বৈষম্যের শিকার হতে হয়। তাঁদের মধ্যে ৫১ শতাংশ নারী এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ৪৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হন তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা, যা প্রায় ৪০ শতাংশ। বিষয় ভিত্তিক বৈষম্য: ফার্মেসি, প্রাণ রসায়ন, ফলিত রসায়ন, খাদ্য ও পুষ্টি বা বস্ত্র প্রকৌশল কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞান- এই সব বিষয়ের প্রাণ হচ্ছে রসায়ন। অন্যভাবে বললে এই বিষয়গুলো রসায়নভিত্তিক মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়। আশ্চর্যজনকভাবে সত্য হচ্ছে এই সকল বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে একজন রসায়ন বিষয়ের পিএইচডি ডিগ্রীধারীকে কিংবা রসায়নে ¯œাতক ড্রাগ ডিসকভারিতে পিএইচডি কিংবা রসায়নে ¯œাতক খাদ্য প্রকৌশলে পিএইচডি অথবা এমন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে শিক্ষকতার সুযোগ প্রদান করা হয় না! অথচ, বহির্বিশে^ কিংবা আমরা যে বিশ^বিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং নিয়ে মাতামাতি করি, সেই সকল উচ্চমানের বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়ে বেসিক বিজ্ঞানের বিজ্ঞ শিক্ষকগণই পড়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান! জলবৎ তরলং হচ্ছে আপনি যেই স্ট্যান্ডার্ড চাইবেন, সেই স্ট্যান্ডার্ডে যারা চলছে প্রথমে তাদের অনুকরণ করতে হবে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর জরিপ চালিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে বিশ^বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে, যা মোট হিসেবের ৬০ শতাংশ। বিশ^বিদ্যালয়ের হল বা ডরমিটরিতে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ৩৭ শতাংশ এবং, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডায় বৈষম্যের শিকার ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবহনে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন প্রায় ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর বাইরে লাইব্রেরি, ক্যাফে, পরীক্ষার হলেও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের বাইরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ৪৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ৫০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এই নি¤œমানের মানবিক যোগ্যতার ভাইরাস থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button