সম্পাদকীয়

শিক্ষা খাতে মনোযোগ বাড়াতে হবে

২২ শতাংশ মানুষ এখনো নিরক্ষর

গত এক বছরে দেশের সাক্ষরতার হার ১ শতাংশও বাড়েনি, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ ও ২০২৪ উভয় বছরেই এই হার ৭৭.৯ শতাংশে স্থির রয়েছে। অর্থাৎ আমাদের দেশের প্রায় ২২ শতাংশ মানুষ এখনো নিরক্ষর। একসময় বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে সাক্ষরতার হার মাত্র ২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই গতিতে চললে সেই লক্ষ্য পূরণ প্রায় অসম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই স্থবিরতার মূল কারণ হলো বছরব্যাপী কার্যক্রমের অভাব। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর বিশাল জনবল থাকলেও তাদের হাতে বর্তমানে কোনো কার্যকর প্রকল্প নেই। সাক্ষরতার মান নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের দেশে প্রচলিত ‘সেলফ রিপোর্টেড’ পদ্ধতিতে মানুষ নিজেই নিজেকে সাক্ষর হিসেবে দাবি করে। অনেক সময় কেবল নাম সই করতে পারলেই তাকে সাক্ষর হিসেবে ধরা হয়, যা আন্তর্জাতিক মানদ- থেকে অনেক পিছিয়ে। এর পরিবর্তে ‘টেস্টেড লিটারেসি’ পদ্ধতি অনুসরণ করলে সাক্ষরতার প্রকৃত চিত্র আরো করুণ হতে পারে বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একুশ শতকে, যখন বিশ্ব দ্রুতগতিতে প্রযুক্তি ও ডিজিটাল জ্ঞানে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের এই পিছিয়ে পড়াটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। আমাদের এই স্থবিরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বছরব্যাপী কার্যকর প্রকল্প হাতে নিতে হবে এবং সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর নিষ্ক্রিয় কর্মীদের কাজে লাগাতে নতুন কর্মসূচি চালু করা জরুরি। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং সেই বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সাক্ষরতার সংজ্ঞা ও মানদ- পুনর্বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা উচিত। একই সঙ্গে দেশের ২১.৯ শতাংশ নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে মূলধারার শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার জন্য একটি সমন্বিত ও কার্যকর কৌশল গ্রহণ করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button