অবৈধ তামাকের বিস্তার: রাজস্ব হারানো ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপদসংকেত

বাংলাদেশে অবৈধ সিগারেট বাজারের বিস্তার এখন এক ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। ইনসাইট মেট্রিক্সের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে অবৈধ সিগারেট বাজারে প্রবেশ করেছে প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি। প্রতি মাসে ৮৩২ মিলিয়ন শলাকা অবৈধ সিগারেট বিক্রি হচ্ছে-যা শুধু অর্থনীতির জন্য নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্যও বড় হুমকি। অধিকাংশ অবৈধ সিগারেট উৎপাদিত হচ্ছে নানা ভুয়া উপায়ে-ট্যাক্স স্ট্যাম্পবিহীন, পুনর্ব্যবহৃত বা সম্পূর্ণ জাল স্ট্যাম্প ব্যবহার করে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে চোরাচালান হওয়া কন্ট্রাব্র্যান্ড পণ্যগুলোও শুল্ক এড়িয়ে সরাসরি বাজারে চলে আসছে। এভাবে রাষ্ট্র প্রায় ৬০০ শতাংশ শুল্ক হারাচ্ছে, যার প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঘোষিত বার্ষিক দুই হাজার কোটি টাকার দ্বিগুণ বা তারও বেশি হতে পারে। কেবল রাজস্ব নয়, এই অবৈধ ব্যবসা জনস্বাস্থ্যের ওপরও ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। বৈধ সিগারেটের দাম বাড়ায় নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠী ও তরুণরা সহজলভ্য সস্তা সিগারেটের ফাঁদে পড়ছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রায় ১৫ শতাংশ খুচরা বিক্রেতা প্রণোদনা পেয়ে অবৈধ সিগারেট বিক্রি করছেন, আর ৮২ শতাংশ দোকানদার নিয়মিত সরবরাহ পাচ্ছেন। রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ইতিমধ্যেই এই ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে কেবল একটি ব্র্যান্ড ‘ওরিস’-এর মাসিক বিক্রি পাঁচ কোটিরও বেশি শলাকা-যা সমস্যার গভীরতা আরও স্পষ্ট করে। সরকারের জন্য এ পরিস্থিতি এক বড় চ্যালেঞ্জ। একদিকে রাষ্ট্র বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে নীতিমালা অকার্যকর হয়ে পড়ছে। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো-অবৈধ সিগারেটের কারণে ধূমপানের হার বেড়ে যাচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে জনস্বাস্থ্য খাতে আরও বিরাট ব্যয় ও সংকট ডেকে আনবে। এখন জরুরি হলো-অবৈধ তামাক দমনে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন, সীমান্তে নজরদারি জোরদার করা এবং খুচরা বাজারে স্ট্যাম্পবিহীন সিগারেটের বিক্রি কঠোরভাবে দমন করা। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও তরুণদের ধূমপানের আসক্তি থেকে দূরে রাখতে কার্যকর কর্মসূচি চালু করতে হবে। রাষ্ট্রকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে অবৈধ সিগারেট ব্যবসা যেমন রাজস্বকে গ্রাস করছে, তেমনি ধীরে ধীরে গ্রাস করবে আমাদের প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ।