তিনবিঘা করিডর: দহগ্রামের কৃষকের ন্যায্য দাবির প্রশ্ন

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা একসময় ছিল বিচ্ছিন্ন ছিটমহল। তিনবিঘা করিডর খুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ১৯৯২ সালে শুরু হয় মুক্তির যাত্রা, যা ২০১১ সালে ২৪ ঘণ্টা চলাচলের সুযোগে পূর্ণতা পায়। কিন্তু প্রায় দুই বছর ধরে করিডর দিয়ে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় আবারও অবরুদ্ধতার নতুন দেয়ালে ঠেকে গেছে এখানকার মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। ধান, ভুট্টা বা অন্যান্য ফসল তাঁরা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বাজারদরের চেয়ে মণপ্রতি ১০০-২০০ টাকা কমে। ব্যবসায়ীদেরও পড়তে হচ্ছে বাড়তি ব্যয় ও সময়ের সংকটে। আগে ফসল সরাসরি ট্রাকে লোড হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেত। এখন ভ্যান বা ট্রাক্টরে মালামাল করিডর পার করে পরে বড় ট্রাকে তুলতে হচ্ছে। এতে কৃষকের আয় কমছে, ব্যবসায়ীর খরচ বাড়ছে, এবং গোটা অঞ্চলের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ছে। এ সমস্যা কেবল অর্থনৈতিক নয়; এটি সামাজিক ও মানবিকও বটে। দহগ্রামের মানুষের বহু বছরের অবরুদ্ধ জীবন শেষ হওয়ার পর তারা যে মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল, এখন সেই স্বাধীন চলাচল সীমাবদ্ধ হওয়ায় জন্ম নিয়েছে নতুন অসন্তোষ। ইতিমধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি ও বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়েছে। এ ধরনের অসন্তোষ দীর্ঘস্থায়ী হলে তা সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্থিতিশীলতা ডেকে আনতে পারে। নির্বাহী কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। কিন্তু এ কথার আড়ালে দহগ্রামের মানুষের দুর্ভোগ উপেক্ষা করা যায় না। সরকারের উচিত দ্রুত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসা এবং করিডরে বড় যানবাহনের চলাচল পুনরায় চালুর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। তিনবিঘা করিডর কেবল একটি সড়ক নয়, এটি দহগ্রামের মানুষের জীবনের সেতুবন্ধন। কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা এবং জনগণের ভোগান্তি দূর করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দহগ্রামের মানুষের মুক্তি যেন আবারও অবরুদ্ধতায় না ঠেকে, সে জন্য জরুরি উদ্যোগ এখনই প্রয়োজন।