গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থার হরিলুট: জবাবদিহি কোথায়?

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাম্প্রতিক চিত্র বাংলাদেশের গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভয়াবহ দুরবস্থা ও অনিয়মের প্রতিচ্ছবি। এখানে পাঁচ বছর ধরে অকেজো অপারেশন থিয়েটারে শত শত রোগীর অস্ত্রোপচার দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকা সত্ত্বেও হিসাব-নিকাশে অসংখ্য অস্ত্রোপচার দেখানো হয়েছে; যন্ত্রপাতি মেরামতের নামে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। অতিরিক্ত বরাদ্দের ওষুধও রোগীরা পাননি, বরং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে জোর করে। দুর্নীতি এখানেই থেমে নেই। আয়া-সুইপারের মতো নি¤œপদে কর্মরত মানুষদের বেতনের বড় অংশ কেটে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ভেষজ বাগানের বরাদ্দ, ওষুধ কেনার বাজেট-সব জায়গায় একই হরিলুটের চিহ্ন। অভিযোগের আঙুল উঠেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে স্টোরকিপার পর্যন্ত। অথচ এ প্রতিষ্ঠানই গ্রামের সাধারণ মানুষের একমাত্র চিকিৎসার ভরসাস্থল। এই অনিয়ম কেবল অর্থ লোপাট নয়; এটি সরাসরি মানুষের জীবনের সঙ্গে খেলা। অকেজো অপারেশন থিয়েটারকে সচল দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থ তছরুপের অর্থ দাঁড়ায়-প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার না হওয়ায় বহু রোগী হয়তো জীবন হারিয়েছে বা জটিলতায় পড়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে সাধারণ মানুষকে, যাদের কাছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রই ছিল শেষ আশ্রয়। সরকারি তদন্ত শুরু হলেও অভিজ্ঞতা বলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ধরনের তদন্ত দায়সারা হয়। প্রকৃত দায়ীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, আর কয়েকটি নামমাত্র বদলি বা শোকজেই শেষ হয় প্রক্রিয়া। ফলে অনিয়মকারীরা বারবার বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এখন জরুরি হলো-স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করা এবং প্রকৃত দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। একই সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আর্থিক স্বচ্ছতা আনতে প্রযুক্তিনির্ভর হিসাব ব্যবস্থা চালু করতে হবে। আর সর্বোপরি, গ্রামের মানুষের মৌলিক চিকিৎসা অধিকার যেন দুর্নীতির বলি না হয়, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম মানে কেবল রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় নয়; এর মানে হলো সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে অবহেলা। এই হরিলুটের দায় যদি নিরপেক্ষভাবে নির্ধারণ না হয়, তবে গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা অচিরেই মানুষের আস্থা হারাবে-যার ক্ষতি অপূরণীয়।