সম্পাদকীয়

পদ্মার বালু লুট: রাষ্ট্র ও পরিবেশের জন্য হুঁশিয়ারি

পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ আবারও প্রমাণ করেছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় আমাদের দুর্বলতা কতটা গভীর। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে মাত্র এক বছরের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৭-১৮ বছর ধরে নির্বিচারে বালু তুলেছে। উচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক আদেশে অবশেষে তাদের কার্যক্রমকে অবৈধ ঘোষণা করা হলেও এ সময়ের মধ্যে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৪০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট হয়ে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন ও পরিবেশগত বিপর্যয়। এই অনিয়ম কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পদ্মার ভাঙনে ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও শিল্প-কারখানা হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই লুটপাট চলে এসেছে প্রশাসনিক নীরবতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের আশ্রয়ে। আইন বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তার যথাযথ প্রয়োগ হয়নি। আদালতের হস্তক্ষেপ না হলে এ অপকর্ম হয়তো আরও চলত। এখন প্রশ্ন-রাষ্ট্র কি কেবল আদালতের নির্দেশের অপেক্ষায় বসে থাকবে? রাজস্ব ক্ষতি, নদীর ভাঙন ও জনগণের দুর্দশার দায় কেউ নেবে না? আইন তো পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছে, অনাপত্তি ভিত্তিক বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। তা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে তিনটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে কার্যক্রম চালাল-তার সঠিক তদন্ত ও দায় নির্ধারণ জরুরি। পদ্মা বাংলাদেশের অন্যতম প্রাণের উৎস। এর প্রবাহ, এর দুই তীরের জমি, মানুষের জীবন-জীবিকা সবই নির্ভর করে এর সুস্থ অবস্থানের ওপর। ব্যক্তিস্বার্থে পদ্মাকে ক্ষতবিক্ষত হতে দিলে ক্ষতি হবে পুরো জাতির। তাই সরকারের প্রতি আমাদের জোর দাবি, আদালতের নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়ন, দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা এবং নদী রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নদী যদি টিকে থাকে, তবেই টিকে থাকবে মানুষের জীবন ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button