সম্পাদকীয়

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন জরুরি

প্রশ্ন জননিরাপত্তার

বাংলাদেশের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক সহিংসতা, ব্যক্তিগত বিরোধ, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এবং কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান- সব মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অপরাধের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তিকে চরমভাবে বিঘিœত করছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৫১ জন নিহত এবং ৭,৬২৬ জন আহত হয়েছেন। এই সহিংসতার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব, প্রতিশোধপরায়ণতা এবং চাঁদাবাজির মতো কারণ। অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তা ও পক্ষপাতমূলক আচরণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। রাজনৈতিক সহিংসতার বাইরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে খুনের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। জায়গাজমির বিরোধ, মাদক ব্যবসা এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এসব হত্যাকা-ের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাতেও চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকা- নতুন আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় হত্যাকা- ও নৃশংস অপরাধের চিত্র প্রায় একই রকম। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে, যা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে। উঠতি বয়সী কিশোর গ্যাংয়ের কারণে সমাজে মান-সম্মান নিয়ে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব গ্যাং সদস্যরা প্রায়ই ভয়ভীতি প্রদর্শন, হামলা ও চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারকে সুপরিকল্পিতভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে নিরপেক্ষ ও সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অপরাধীরা বুঝতে পারে যে সহিংসতা বা হত্যাকা- ঘটিয়ে পার পাওয়া যাবে না। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) প্রকাশিত গ্লোবাল পিস ইনডেক্সে বাংলাদেশ ৩৩ ধাপ পিছিয়ে পড়েছে, যা দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতিকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। মানুষ চায় নিরাপদে, সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে। সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, এবং এখনই সময় সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button