সম্পাদকীয়

রামেবির গাছ কেলেঙ্কারি: দায় এড়ানোর প্রতিযোগিতা নয়, চাই জবাবদিহি

রাজশাহীতে নির্মীয়মাণ রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় (রামেবি) ক্যাম্পাস এলাকায় সহ¯্রাধিক গাছ কেটে ফেলার ঘটনা দেশের শিক্ষা ও পরিবেশ খাত উভয়ের জন্যই এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। পত্রপত্রিকার প্রকাশিত তথ্যে থেকে জানা গেছে, কোনো দরপত্র ছাড়াই এবং বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া রাতারাতি গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এর আগে প্রায় ২০ লাখ টাকার আম গোপনে বিক্রি করারও প্রমাণ মেলে। পরে লিজ দেখানোর চেষ্টা যেন কেলেঙ্কারিকে বৈধ করার অদ্ভুত প্রয়াস। বিশ^বিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী সাত হাজারেরও বেশি গাছ ছিল ওই ক্যাম্পাস এলাকায়। তার একটি বড় অংশ কেটে ফেলা হলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, “অফিশিয়ালি গাছ কাটা হয়নি।” আবার প্রকল্প পরিচালক বলছেন, “ঠিকাদার বেআইনিভাবে কেটেছে।” অন্যদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, “আমাদের কাজ শুধু বালু ভরাট, গাছ কাটার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।” দায় স্বীকারের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট সবাই এখন দায় এড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। কিন্তু বাস্তবতা স্পষ্ট-গাছ কাটা হয়েছে, ক্যাম্পাস জুড়ে তার প্রমাণ ছড়িয়ে আছে। গাছ কাটা বৈধ করার চেষ্টা হয়েছে পিছনের তারিখে অনুমতির কাগজপত্র বানিয়ে। এতে বিশ^বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে, পাশাপাশি দেশের আইন ও পরিবেশ দুটোই মারাত্মকভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কারা-তা নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারের। তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন, সিন্ডিকেট সদস্য, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যদি প্রকৃত অপরাধীরা চিহ্নিত হয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না পান, তবে এ ধরনের অনিয়ম বারবার ঘটবে। গাছ শুধু অর্থনৈতিক সম্পদ নয়, এটি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য অপরিহার্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে, উন্নয়ন প্রকল্পের আড়ালে যদি পরিবেশ ধ্বংস হয়, তবে সেই উন্নয়ন টেকসই হবে না। রামেবির গাছ কেলেঙ্কারি শুধু রাজশাহীর নয়, পুরো দেশের জন্য এক সতর্কবার্তা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button