সম্পাদকীয়

নির্বাচনের আগে অস্থিতিশীলতা কাম্য নয়

নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বা শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ তত বাড়ছে। পরস্পরবিরোধী অবস্থান থেকে রাজপথে নামার বা শক্তি প্রদর্শনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ফলে নির্বাচন নিয়ে যেমন অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক অঙ্গন নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব কারণে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা আরো বেশি উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচ মাস বাকি। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তো বটেই, খোদ প্রধান উপদেষ্টা নিজেও নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন বানচাল করার লক্ষ্যে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ঘোষিত সময় বা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে যেকোনো মূল্যে নির্বাচন করতে হবে। তা না হলে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে এবং জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের রাজনীতি এখন অস্থির আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। কোনো একটি দেশ সংকটে পড়লে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভূমিকা রাখতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা যেন উল্টোটাই দেখছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যই প্রবল। একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক নাগরিক রাষ্ট্রের চেয়ে ঊর্ধ্বে কোনো কিছুকে স্থান দিতে পারেন না। কিন্তু আমাদের দেশের একশ্রেণির মানুষের মধ্যে এই চেতনাবোধ নেই বললেই চলে। তারা সব সময় রাষ্ট্রের চেয়ে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তবে আশার কথা যে, এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে অধিকাংশ সময় এরাই দেশ শাসন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তারা সংকীর্ণ ব্যক্তি অথবা দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের এই অন্যায় কর্ম কখনই প্রতিবাদহীনভাবে মেনে নেয়নি। বাংলাদেশের মানুষ বীরের জাতি। তারা জাতির যে কোনো সংকটে নিজের জীবন দিয়ে হলেও সংকট মোচনের চেষ্টা করেছে। এই জাতি যেমন যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তেমনি আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থেকেছে। যেসব রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে শামিল ছিল বা সমর্থন করেছে তারা সবাই চায় দেশে কার্যকর, উদার এবং কল্যাণমূলক গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হোক। এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হোক যেখানে আর কোনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যদি বাংলাদেশকে সত্যিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় তাহলে কোন্ পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা নিয়ে মতান্তর থাকা উচিত নয়। জাতীয় স্বার্থকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button