আলুর দামে অস্থিরতা ও কৃষকের সঙ্কট

বাংলাদেশে আলু এখন শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য নয়, এটি কৃষকদের আয়ের একটি বড় উৎস। কিন্তু উৎপাদন খরচ, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণের অনিশ্চয়তা এই খাতকে প্রায়শই সঙ্কটে ফেলে। সর্বশেষ কুড়িগ্রামের হিমাগারগুলোতে বিপুল পরিমাণ আলু অবিক্রীত পড়ে থাকা এবং সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি হওয়া সেই সঙ্কটকেই নতুন করে সামনে এনেছে। সরকার গত ২৭ আগস্ট হিমাগার গেটে আলুর সর্বনি¤œ মূল্য কেজিপ্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ করেছিল। পাশাপাশি ৫০ হাজার টন আলু কেনার ঘোষণাও দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা কেজিপ্রতি ১২ থেকে সাড়ে ১২ টাকায় আলু বিক্রি করছেন-যা উৎপাদন খরচের প্রায় অর্ধেক। কৃষকদের হিসেবে, এক কেজি আলু উৎপাদনেই খরচ পড়ছে ২২ টাকা। সংরক্ষণ ব্যয় যুক্ত হলে তা দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৭ টাকা। ফলে এ পরিস্থিতি কৃষকদের জন্য বড় ধরনের লোকসান ডেকে এনেছে। সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠছে হিমাগারে থাকা মজুদ আলুর কারণে। কুড়িগ্রামের চারটি হিমাগারে এখনো প্রায় ৩৩ হাজার টন আলু অবিক্রীত রয়েছে। সময় হাতে আছে মাত্র কয়েক মাস। অল্প সময়ে এত বিপুল পরিমাণ আলু বিক্রি করা কার্যত কঠিন। কৃষকরা তাই দ্বিধায় পড়েছেন-লোকসান গুনে আলু বিক্রি করবেন, নাকি সংরক্ষণ খরচ বাড়িয়ে অপেক্ষা করবেন। প্রশ্ন উঠছে সরকারের নির্ধারিত দরের কার্যকারিতা নিয়েও। হিমাগার কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, তাঁরা এ বিষয়ে কোনো সরকারি চিঠি পাননি। আবার জেলা মার্কেটিং অফিসার বলছেন, চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং মনিটরিং চলছে। এই দ্বন্দ্ব স্পষ্ট করে দেয়, নীতি ও বাস্তবায়নের মধ্যে বড় ফাঁক থেকে যাচ্ছে। নীতি প্রণয়ন করলেই হবে না, সঠিক তদারকি ও কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনা জরুরি। এ পরিস্থিতিতে কৃষকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সরকার ঘোষিত আলু কেনার উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে বাজারে কৃত্রিম চাপ কমে। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা যে দরে আলু বিক্রি করছেন, সেটি উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে কার্যকর বাজার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এছাড়াও হিমাগার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবে প্রতিফলিত হয়। আলু কেবল কৃষকের জীবিকা নয়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গেও সম্পর্কিত। আলুর দামের অস্থিরতা কৃষকের আস্থা নষ্ট করলে ভবিষ্যতে উৎপাদনেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সরকার, বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ব্যবসায়ীদের যৌথভাবে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত হয় এবং ভোক্তাও স্থিতিশীল দামে আলু কিনতে পারে।
