ডেঙ্গু পরিস্থিতি: সতর্কতা নয়, এখন প্রয়োজন জরুরি উদ্যোগ

ডেঙ্গু এখন আর মৌসুমি রোগের সীমায় নেই; এটি সারাবছরের জন্যই একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রূপ নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তথ্য দেখা গেছে, এক দিনে নতুন করে ৬৪৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। চলতি বছরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৪৬১, আর প্রাণ হারিয়েছেন ১৬৭ জন। সংখ্যাগুলো কেবল পরিসংখ্যান নয়-এগুলো প্রতিদিনের ভোগান্তি ও অপূরণীয় ক্ষতির নির্মম চিত্র। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১১ হাজার ৮৮৩ জন রোগী শনাক্ত হলেও মৃত্যুর দিক থেকে ঢাকাই শীর্ষে-এ পর্যন্ত ১০৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যা মোট মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশের কাছাকাছি। অর্থাৎ রাজধানীর স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও নগর ব্যবস্থাপনায় গুরুতর দুর্বলতা রয়েছে। ডেঙ্গুর বিস্তারে প্রধান কারণ হিসেবে বারবার উঠে এসেছে নগর ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা। নর্দমা, খাল, নির্মাণাধীন ভবন কিংবা ফেলে রাখা জঞ্জালে জমে থাকা পানি এডিস মশার বংশবিস্তার ঘটাচ্ছে। শুধু ফগার মেশিন চালানো বা সীমিত সময়ে অভিযান চালানো কার্যকর সমাধান নয়। এডিস নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। মাসওয়ারি তথ্য বলছে, জুন থেকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে সংক্রমণের হার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ থেকেই স্পষ্ট, ডেঙ্গু মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। তবে হতাশ হওয়ার মতো নয়। বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্য অভিজ্ঞতা বলছে, নিয়মিত মশকনিধন কার্যক্রম, নাগরিক সচেতনতা, হাসপাতালের প্রস্তুতি এবং সমন্বিত উদ্যোগ নিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এজন্য নগর কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার ও নাগরিকদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত শয্যা, স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত রাখা এবং চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণও অত্যন্ত জরুরি। ডেঙ্গু এখন একটি জাতীয় সঙ্কট। তাই নীতি-নির্ধারকদের এটিকে মৌসুমি সমস্যা ভেবে অবহেলা করলে চলবে না। এখনই পরিকল্পিত, সমন্বিত ও টেকসই কর্মসূচি হাতে নিতে হবে-যেন ভবিষ্যতে আর এভাবে প্রাণহানি না ঘটে। জনগণের জীবন সুরক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব, আর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সেই দায়িত্ব পালনের একটি বড় পরীক্ষা।
