নিত্যপণ্যের বাজারে লাগাম টানতে হবে এখনই

রাজধানীসহ দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনকে গভীর সংকটে ফেলেছে। মাছ, মাংস, ডিম থেকে শুরু করে সবজি-সব কিছুর দাম এতটাই বেড়েছে যে সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় বহু পরিবার ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। টিসিবির সর্বশেষ বাজারদর পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৭৫-৮০ টাকা, মুরগির ডিম ডজনপ্রতি ১৩৫-১৪৫ টাকা, মসুর ডাল ১৬০-১৮০ টাকা, করলা ১০০-১২০ টাকা, এমনকি সবচেয়ে সস্তা সবজি পেঁপেও ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার বাজারে যে সবজি দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়, জেলা শহরে সেটি তুলনামূলক সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে। এ থেকেই স্পষ্ট হয়, সরবরাহ শৃঙ্খলে অস্বচ্ছতা ও মনোপলি ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। ক্রেতারা মনে করছেন, সরকারের পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় বাজারে অরাজকতা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা দায় দিচ্ছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সরবরাহ ঘাটতির ওপর। তবে বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও সরকারি সংস্থার দুর্বল তদারকিই পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করেছে। ভোক্তা অধিকার কর্মীরা যুক্তি দিচ্ছেন, ভোক্তাদের সহনশীলতাকে পুঁজি করেই অসাধু ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়াচ্ছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ যথার্থই বলেছেন-মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা, পাইকারি পর্যায়ে মনোপলি ভাঙা, আমদানিতে শুল্ক হ্রাস এবং কৃষিপণ্যের সরাসরি বিপণন চ্যানেল শক্তিশালী করতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে-এই অবস্থার স্থায়ী সমাধান কোথায়? কেবল সাময়িক অভিযান বা অস্থায়ী শুল্কছাড় দিয়ে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। দরকার একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, যেখানে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পুরো সরবরাহ সুশৃঙ্খল করা হবে। পাশাপাশি বাজার মনিটরিং ও তদারকি জোরদার করা অপরিহার্য। দেশের সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের বাজারে টিকে থাকার লড়াই করছে। নীতি-নির্ধারকদের এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফিরে আসে। খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতার সঙ্গেও জড়িত। এই মৌলিক সত্য অনুধাবন করে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ও সুসংগঠিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
