এআই বিনিয়োগে উচ্ছ্বাস নাকি অশনিসংকেত?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের যুগ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থিক খাত থেকে শুরু করে বৈশি^ক বাণিজ্যে এক নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা এআই কোম্পানির শেয়ারে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে-এই বিনিয়োগের আর্থিক ফল কতটা নিশ্চিত? সুইস ব্যাংক ইউবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত এআই কোম্পানিগুলোর বার্ষিক আয় প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। অথচ ২০২৫-২৮ সালের মধ্যে শুধু ডেটা সেন্টারেই বিনিয়োগ হবে ২.৯ ট্রিলিয়ন ডলার। একই সময়ে এমআইটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, জেনারেটিভ এআই প্রকল্পে বিনিয়োগ করা ৯৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এখনো কোনো রিটার্ন পায়নি। অর্থাৎ প্রত্যাশা আকাশচুম্বী হলেও লাভ তুলনামূলক সামান্য। এআই নিয়ে শেয়ারবাজারে উন্মাদনা অনেকাংশে ডটকম বুদবুদের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। ১৯৯০-এর শেষ দিকে ডটকম শেয়ারের দাম আকাশছোঁয়া হলেও বাস্তবতা মেলেনি, পরে ব্যাপক ধস নেমেছিল। তবে ধসের পরও ইন্টারনেট বিশ^ অর্থনীতিকে পাল্টে দেয়। এআইয়ের ক্ষেত্রেও হয়তো একই ছবি দেখা যাবে-তাৎক্ষণিক লাভ না এলেও দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। বড় প্রশ্ন হলো, ঝুঁকির বোঝা কে বহন করবে? মরগ্যান স্ট্যানলির হিসাবে, ডেটা সেন্টার খাতে আসন্ন বিনিয়োগের প্রায় অর্ধেক আসছে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে। ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ঝুঁকি সীমিত। কিন্তু বীমা কোম্পানি, পেনশন ফান্ড, সার্বভৌম সম্পদ তহবিল ও ধনী পরিবারগুলোও এআই শেয়ার কিনছে। শেয়ারমূল্য হঠাৎ কমে গেলে এসব প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশ সম্পদ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা আছে। সুতরাং ঝুঁকি ভোক্তা ব্যয় ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। এআই খাতে কিছু মৌলিক চ্যালেঞ্জও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে-অত্যধিক মূলধন প্রয়োজন, সাইবার নিরাপত্তার হুমকি, কঠোর নীতিমালা, শ্রমবাজারে অটোমেশনের অভিঘাত এবং বাজারের অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ। এগুলো সামাল না দিলে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত রিটার্ন পাওয়া কঠিন হবে। তবু বাস্তবতা হলো, প্রযুক্তি একবার গতি পেলে তাকে থামানো যায় না। এআই ইতিমধ্যেই উৎপাদনশীলতা ও উদ্ভাবনের নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। তবে বিনিয়োগকারীদের উচিত হবে আবেগের বশে সিদ্ধান্ত না নিয়ে ঝুঁকি মূল্যায়ন করে বিনিয়োগ করা। নীতিনির্ধারকদেরও সতর্কভাবে এগোতে হবে-একদিকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অব্যাহত রাখা, অন্যদিকে বাজার ও আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। অতএব, এআই বিনিয়োগে এখনই সোনার হরিণ খোঁজার মতো তাড়াহুড়া না করে বাস্তব সম্ভাবনা ও ঝুঁকি দুটোই বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। তা না হলে প্রযুক্তির যুগে আরেকটি “বুদবুদ”তৈরি হয়ে যেতে পারে, যার অভিঘাত হবে বৈশি^ক অর্থনীতিতে।
