সম্পাদকীয়

আস্থা ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি বেসরকারি খাত। রপ্তানি, কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধির বড় অংশই আসে উদ্যোক্তা ও শিল্পপতিদের উদ্যোগ থেকে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে মামলাজট, ভাঙচুর, শ্রমিক অসন্তোষ ও হয়রানিমূলক কর্মকা-ে এই খাত গভীর সংকটে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যা শুধু নতুন বিনিয়োগকে নিরুৎসাহ করছে না, বিদ্যমান শিল্পকারখানাগুলোকেও স্থবির করে তুলছে। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে নানা অস্থিরতায় অনেক উদ্যোক্তা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাঁদের অনেকে এখনো ফেরেননি। ফলে কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ছে, শ্রমিকেরা কর্মসংস্থান হারাচ্ছেন, আর অর্থনীতির চাকা গতি হারাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগ কমে যাওয়া, ব্যাংকঋণের প্রবৃদ্ধি সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে আসা এবং মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি হ্রাস পাওয়া-সবই একই সংকটের বহিঃপ্রকাশ। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ স্পষ্ট করে বলেছেন, বিনিয়োগের জন্য কেবল মূলধনই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন একটি স্থিতিশীল ও নিরাপদ পরিবেশ। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা, কারখানা দখল বা আগুনের ঘটনায় সেই পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, সরকারের ঘোষিত প্রতিশ্রুতি তখনই কার্যকর হবে, যখন তার বাস্তব প্রয়োগ দেখা যাবে। সরকার ইতিমধ্যে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছে। তবে কেবল আশ^াসে আস্থা ফিরবে না। যেসব উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া মামলা হয়েছে, সেগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, শ্রমিক-নিয়োগকর্তা সম্পর্ক মজবুত করা এবং দীর্ঘমেয়াদি পূর্বানুমানযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। ব্যবসায়ীরা নির্বিঘেœ উৎপাদনে মনোযোগ দিতে পারলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে, রপ্তানি বাড়বে এবং অর্থনীতির চাকায় নতুন গতি আসবে। এখানে আরেকটি দিকও মনে রাখতে হবে। একটি নির্দিষ্ট বছরের বিনিয়োগ সাধারণত ভবিষ্যতের কয়েক বছরের প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। সুতরাং ২০২৫ সালে বিনিয়োগ স্থবির হলে তার অভিঘাত দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে আস্থার সংকট নিরসন জরুরি। বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রায় বেসরকারি খাতকে পাশ কাটিয়ে এগোনো সম্ভব নয়। তাই সরকারের প্রথম দায়িত্ব হবে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মামলা-হামলার সংস্কৃতি বন্ধ করতে না পারলে অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানো কঠিন হবে। এখন সময় বাস্তব পদক্ষেপের। কথায় নয়, কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমেই ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরাতে হবে। নিরাপদ, স্থিতিশীল ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশই হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার একমাত্র পথ।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button