বিনিয়োগ স্থবিরতার সংকট কাটাতে আস্থা ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই

অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের মহাপরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় ভরসা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গেল মার্চ প্রান্তিকে এসব অঞ্চলে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে মাত্র এক লাখ ডলার-যা আগের বছরের তুলনায় ৯৩ শতাংশের বেশি কম। শুধু নতুন বিনিয়োগই নয়, বিদ্যমান বিনিয়োগও গুটিয়ে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।অর্থনীতিবিদরা এ পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা, আস্থার সংকট, উচ্চ কর ও সুদহার, এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতাকে দায়ী করছেন। দেশের অন্যতম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এখনো প্লট প্রস্তুত নয়, ইউটিলিটি সেবা সংকট তীব্র, এমনকি স্থানীয় বিরোধও বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহ করছে। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো বড় প্রকল্পেও পানি ও গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত হয়নি। ফলে উদ্যোক্তারা অপেক্ষা করতে করতে নিরাশ হচ্ছেন, কেউ কেউ বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছেন।এর পাশাপাশি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীরা জানেন, স্থিতিশীলতা ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সম্ভব নয়। তাই অর্থনীতিবিদরা স্পষ্ট করে বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং কার্যকর নীতি-সহায়ক পরিবেশ ছাড়া এই আস্থার সংকট কাটানো যাবে না।সরকার ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে, একসঙ্গে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল নয়, বরং কয়েকটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন করাই বাস্তবসম্মত। তবে শুধু সংখ্যায় সীমাবদ্ধ না থেকে বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামো, সেবার নিশ্চয়তা এবং প্রশাসনিক জটিলতা কমানো এখন সময়ের দাবি।বিদেশি বিনিয়োগ একটি দেশের প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি। বাংলাদেশ যদি এ ক্ষেত্রে সুযোগ হারায়, তবে কর্মসংস্থান ও শিল্পায়নের স্বপ্নও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখনই আস্থা ফেরাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, কর-সুদহার যৌক্তিক করা, জ্বালানি ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং প্রশাসনিক সংস্কার কার্যকর করা জরুরি। এ সংকট যদি দ্রুত মোকাবিলা না করা যায়, তবে অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগ আকর্ষণের পরিবর্তে আস্থাহীনতার প্রতীকে পরিণত হবে।
