রাজনৈতিক সহিংসতার লাগাম টানা জরুরি

জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা আবারও বেড়ে চলেছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এক বছরে অন্তত ৯৮৮টি রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫১ জন এবং আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৬২৬ জন। আগস্ট মাসেই ৬৭টি ঘটনায় চারজন নিহত ও ৫১৪ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তঃকোন্দল, পারস্পরিক সংঘর্ষ ও পুলিশ-বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি সংঘাত-সবই এতে ভূমিকা রেখেছে।রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও স্থাপনা দখলের মতো কারণে সংঘাতের সূত্রপাত ঘটছে। গুলি, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট-সব মিলিয়ে সহিংসতার চিত্র ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বড়দলগুলোর ভেতরকার কোন্দলেই শত শত মানুষ আহত হয়েছেন এবং বহু প্রাণহানি ঘটেছে। এ ধরনের প্রবণতা রাজনৈতিক সংস্কৃতির গভীর দুর্বলতাকে প্রকাশ করছে।মানবাধিকার সংস্থা, গবেষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে অস্থিরতা আরও বাড়ছে। অথচ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার কথা, সেটি দৃশ্যমান নয়। পুলিশের দাবি-তারা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখছে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, হত্যা মামলা ও সহিংসতার ঘটনা উল্টো বাড়ছেই।রাজনীতি যদি জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে ভীতি সঞ্চারের হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরের বিরোধ সমাধানে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা, সহিংসতায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতাকে শান্তিপূর্ণ রাখাই এখন জরুরি। দেশে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীলতা, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং নির্বাচনকে উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজন করার বিকল্প নেই। নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার লাগাম টানতে এখনই পদক্ষেপ না নিলে, এর দায় রাজনীতি ও রাষ্ট্র উভয়কেই বহন করতে হবে।
