নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

বাজারে অস্থিরতা
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি, প্রতিদিনের বাজারে গিয়ে চরম অসহায়ত্বের মুখোমুখি হচ্ছে। আয় স্থবির, অথচ ব্যয় বেড়েই চলেছে। খাদ্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। চাল, ডাল, ডিম, মুরগি, পেঁয়াজ- প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বিশেষ করে চালের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ তুঙ্গে। এক কেজি মোটা চালের দাম ৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে, আর মাঝারি ও উন্নত মানের চালের দাম ৬৫- ৭৫ টাকার মধ্যে। ডিমের হালি ৫০ টাকার নিচে পাওয়া দুষ্কর, পেঁয়াজের কেজি ৮০- ১০০ টাকা, আর ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকার কাছাকাছি। অথচ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে দেখা যাচ্ছে, আগস্ট মাসে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৮.২৯ শতাংশে- যা গত তিন বছরে সর্বনি¤œ। এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈপরীত্যের মূল কারণ হলো পরিসংখ্যানের পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা এবং বাজারে কার্যকর নজরদারির অভাব। খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি এখন ৭.৬০ শতাংশ, যা আগের মাসের তুলনায় সামান্য কম হলেও বাস্তবে তা ভোক্তাদের জন্য কোনো স্বস্তি বয়ে আনছে না। খাদ্যবহির্ভূত খাতে কিছু পণ্যের দাম কমলেও তা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যয়ের তুলনায় নগণ্য। বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, মজুদদারি, সরবরাহে কৃত্রিম সংকট এবং অপ্রতুল মনিটরিং- এই সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা। কেবল টিসিবির মাধ্যমে সীমিত পরিসরে পণ্য বিক্রি নয়, বরং ব্যাপকভাবে খোলাবাজারে বিক্রয় কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং, মজুদদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, এবং সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানো জরুরি। এছাড়া, কৃষিপণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রয়োজন। কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে, যাতে উৎপাদন বাড়ে এবং বাজারে সরবরাহ স্থিতিশীল থাকে। একইসঙ্গে, ভোক্তাদের জন্য একটি স্বচ্ছ ও তথ্যভিত্তিক বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে দাম নির্ধারণ হবে বাস্তব চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে, কোনো গোষ্ঠীর ইচ্ছাধীন নয়।
