সম্পাদকীয়

রক্ষায় পদক্ষেপ জরুরি

হুমকির মুখে নদী

আমাদের দেশের ভূপ্রকৃতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে নদীর সম্পর্ক গভীর। নদীই এই দেশের প্রাণ। অথচ আজ নদীগুলো ধ্বংসের পথে। রাজধানী ঢাকার চারপাশে থাকা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী চরম দূষণ ও দখলের শিকার হয়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। নদীর জায়গা দখল, বালু ও মাটি দিয়ে ভরাট, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, শিল্প ও গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলা—এসব কারণে নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু প্রাকৃতিক নয়, মানুষের অসচেতনতা ও লোভই নদী ধ্বংসের মূল কারণ। বিশেষ করে রাজধানীর পাশের নদীগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। শিল্পাঞ্চল ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নদীগুলো যেন বর্জ্য ফেলার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীর পানি এতটাই দূষিত যে সেখানে মাছ তো দূরের কথা, জলজ কীটও টিকে থাকতে পারে না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বছরে গড়ে ৩.০১ মিলিগ্রাম/লিটার, যেখানে জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ৫ মিলিগ্রাম/লিটার। শীতকালে এই মাত্রা নেমে আসে ০.৬৩ মিলিগ্রামে, যা একেবারেই বিপজ্জনক। তবে আশার কথা হলো, দূষণমুক্ত করা সম্ভব- যদি আমরা সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করি। পরিবেশবিদদের মতে, প্রথমত কলকারখানার বর্জ্য পরিশোধনের জন্য আধুনিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নদীতে পানির প্রবাহ বাড়াতে হবে, যেমন অতীতে বুড়িগঙ্গা ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা থেকে পানি পেত। তৃতীয়ত, নদীর তলদেশ পরিষ্কার করে গভীরতা ও প্রশস্ততা বাড়াতে হবে। তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর অবস্থাও একই রকম। নানা পরিকল্পনা যেমন সার্কুলার নৌপথ, ওয়াটার বাস চালুর কথা শোনা গেলেও বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। নদীখননের নামে প্রচুর অর্থ ব্যয় হলেও দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। এখন সময় এসেছে কথার চেয়ে কাজে মনোযোগ দেওয়ার। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো রক্ষায় কার্যকর ও টেকসই উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য নদীগুলোর জন্যও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে- এই সত্যকে সামনে রেখে আমাদের এগোতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button