পান্থকুঞ্জ রক্ষায় হাইকোর্টের নির্দেশ

রাজধানীর সীমিত সবুজের মধ্যে পান্থকুঞ্জ উদ্যান একটি উল্লেখযোগ্য নাম। জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এ উদ্যান শুধু বিনোদনের জায়গা নয়, নগরবাসীর শ^াস নেওয়ার অবলম্বনও। কিন্তু দ্রুতগতির উড়ালসড়ক প্রকল্পের ‘সংযোগ সড়ক’ নির্মাণের কারণে এই উদ্যানের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছিল। সম্প্রতি হাইকোর্ট পান্থকুঞ্জে সড়ক নির্মাণকাজে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে উদ্যানটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। পরিবেশকর্মী, শিক্ষক, লেখক ও গবেষকদের করা রিটের প্রাথমিক শুনানির পর এ আদেশ এলো। ২০১৫ সালেই হাইকোর্ট পান্থকুঞ্জকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই রায় কার্যকর থাকা সত্ত্বেও পরে নতুন করে প্রকল্পের কাজ শুরুর চেষ্টা হয়েছে। গাছ কাটা শুরু হলে গত বছর থেকে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। আন্দোলনকারীদের দাবি-সংযোগ সড়ক নির্মিত হলে কেবল পান্থকুঞ্জ নয়, হাতিরঝিলও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাজধানীর দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা ও যানজট মোকাবিলায় অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি-এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে নগরীর সীমিত খোলা জায়গা ও সবুজ টিকিয়ে রাখাও সমান জরুরি। শহরে উদ্যান ও জলাশয় শুধু সৌন্দর্য বা বিনোদনের জন্য নয়; এগুলো পরিবেশগত ভারসাম্য, বায়ু বিশুদ্ধকরণ এবং নাগরিকের মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। তাই উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষার মধ্যে সমন্বয় ঘটানো ছাড়া টেকসই নগরায়ণ সম্ভব নয়। আইনের দৃষ্টিকোণ থেকেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। হাইকোর্টের পূর্ববর্তী নির্দেশ অমান্য করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা জনস্বার্থকে অগ্রাহ্য করার শামিল। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যদি আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে কার্যকর না করে, তবে নাগরিকদের আস্থা ক্ষুণœ হয়। তাই আদালতের এ নির্দেশ কেবল পান্থকুঞ্জ নয়, সামগ্রিকভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। এখন সরকারের দায়িত্ব হলো আদালতের রায় যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা, পান্থকুঞ্জকে নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা এবং ভবিষ্যতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নের সময় পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা কঠোরভাবে অনুসরণ করা। উন্নয়ন যে পরিবেশ ধ্বংস করে আসবে না, বরং পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে-এমন নিশ্চয়তাই নগরবাসীর প্রত্যাশা।