গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে

একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ধরা হয় গণমাধ্যমকে। আধুনিক গণমাধ্যম মানবসভ্যতার বিস্ময়কর আবিষ্কার। মানুষের জীবন ধারণ আর গণমাধ্যম যেন একই সূত্রে গাঁথা। গণমাধ্যমের কল্যাণে পৃথিবী নামক একটি গ্রহ তার সুবৃহৎ বিস্তৃত ও বিশাল ব্যাপ্তি থাকা সত্ত্বেও একটি ঘর ও একই পরিবেশের সদস্যের মতো হয়ে উঠেছে। আর একীভূত সম্পর্কের মূল সূত্র হলো স্বাধীনভাবে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যার মূল নিয়ামক। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নম্বর নম্বর অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে ‘কেবল সকল নাগরিকের চিন্তা ও বিবেক, বাক, সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকবে।’ ১৯৪৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের প্রথম অধিবেশনে গৃহীত রেজুলেশন ৫৯(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিভাষাটির উৎসস্থল হলো ‘তথ্যের স্বাধীনতা’ থেকে। আর তথ্যের স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক মানবাধিকার। কেননা তথ্যের স্বাধীনতা নিশ্চয়তা কিংবা এর অবাধ প্রবাহই সমানভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গণমাধ্যমকে অনেকটা চাপে থাকতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়। অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলেন, নতুন বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগ আমলে কেউ সরকারের বিরোধিতা করলেই ‘বিএনপি-জামায়াত’ ট্যাগ লাগানো হতো। এখন ট্যাগ লাগানো হয় ‘স্বৈরাচারের দোসর’। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার সময় বিশ^ মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২১তম। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১৫ বছরে বিশ^ মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ৪৪ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এ বছর বিশ^ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৬ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। তবে সূচকে এবারো বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিস্থিতি বেশ গুরুতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২৫ সালের সূচক থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ৩৩ দশমিক ৭১ স্কোর নিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম। ২০২৪ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫তম। নেপাল (৯০তম), শ্রীলংকা (১৩৯তম) ও মালদ্বীপ (১০৪তম) বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে কোনোভাবেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণের আশঙ্কা তৈরি না হয়। এসব পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকার গ্রহণ করলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় রাখা এবং সাংবাদিকদের কাজ করার সুযোগের সমতা বৃদ্ধি পাবে।