সম্পাদকীয়

বছর ব্যবধানে অপহরণ দ্বিগুণের বেশি

অপহরণ বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কিত সমাজ: আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে
বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাত্র আট মাসে ৭১৫ জন মানুষ অপহরণের শিকার হয়েছেন। গত বছরের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ৩৪০। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে অপহরণের হার দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। শুধু জুলাই মাসেই অপহরণ হয়েছে ১০৯ জন-যা গত ছয় বছরের মধ্যে একক মাসে সর্বোচ্চ। গড়ে প্রতিদিন তিনজনের বেশি মানুষ অপহৃত হওয়ার এ চিত্র নিঃসন্দেহে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির গুরুতর ইঙ্গিত বহন করে। অপহরণের কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আর্থিক সংকট অন্যতম চালিকাশক্তি। দেশের বহু পরিবার একজন উপার্জনকারীর ওপর নির্ভরশীল। তার আয় বন্ধ হয়ে গেলে প্রথমে সঞ্চয়, পরে ঋণ-অবশেষে অনেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এতে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা সক্রিয় ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও পারিবারিক শত্রুতা, ধর্ষণ কিংবা প্রতিশোধমূলক ঘটনাও অপহরণের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা যেমন-চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ, কুমিল্লায় রিকশাচালককে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে হত্যা, কিংবা চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাওনা টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে অপহরণ-এসব উদাহরণ স্পষ্ট করে দেয় অপরাধের বহুমাত্রিকতা। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, মামলার সংখ্যার চেয়ে প্রকৃত ঘটনা বেশি। আবার অনেক সময় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে মামলা করাই যায় না। ফলে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অপরাধবিষয়ক বিশেষজ্ঞরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন-যখন অপরাধ বাড়ে, তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কঠোর পদক্ষেপ না নিয়ে বরং ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। এতে অপরাধীরা আরও উৎসাহ পায়। রাজনৈতিক স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহার সমাজে অপরাধ দমনের পরিবর্তে তাকে বাড়িয়ে দেয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কয়েকটি বিষয় জরুরি। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। এছাড়াও মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় গতি আনতে হবে, যাতে অপরাধীরা শাস্তি এড়াতে না পারে। পাশাপাশি বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক সংকট কমানোর দিকে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে-কারণ কর্মহীনতা অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অপহরণ শুধু একটি অপরাধ নয়, এটি সমাজের ভেতরে ভীতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি করে। প্রতিদিন গড়ে তিনজন মানুষ অপহৃত হওয়ার বাস্তবতা আমাদের ভাবতে বাধ্য করে: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এ অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া সমাজে স্থিতি ফিরিয়ে আনার আর কোনো পথ নেই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button