সম্পাদকীয়

ঢাকার রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি

রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে বিগত সরকার বেশকিছু উদ্যোগ নিলেও তা কমেনি বরং সড়কগুলো এখন ব্যক্তিগত গাড়িতে ঠাসা। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এখন শতভাগ ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন গড়ে ৪০টি করে ব্যক্তিগত গাড়ি নামছে। ২০১০ সাল পর্যন্ত ঢাকার রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার; যা ২০২৩ সালে হয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার। ইতঃপূর্বে রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যার বেশকিছু এখন দৃশ্যমান। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এর অন্যতম। বেশকিছু প্রকল্প এখনো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ঢাকার রাস্তায় শৃঙ্খলা নেই বললেই চলে। সরু সড়ক, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দাপট, অতিরিক্ত মোটরসাইকেল সব মিলিয়ে গণপরিবহণ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। তদুপরি বাসগুলো যেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক। এগুলো রাস্তার কোনো নিয়ম-কানুনই মানে না। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল ও বাড়ছে পঙ্গুত্ববরণ করা মানুষের সংখ্যা। ঘর থেকে বের হলেই সড়কে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মে সীমাহীন দুর্ভোগ-ভোগান্তি মানুষের নিত্যসঙ্গী। ফুটপাত দখল, সড়ক-মহাসড়কে বাস ও ট্রাক পার্কিংয়ের মাধ্যমে রাস্তাকে সংকুচিত করা, অদক্ষ চালক ও সহকারী দিয়ে গাড়ি চালানো এবং সড়ক ব্যবস্থাপনায় নানা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া মহাসড়কে থ্রি-হুইলার জাতীয় যানবাহনের চলাচল বৃদ্ধি, মাত্রাতিরিক্ত গতি, ত্রুটিপূর্ণ ও অবৈধ যান চলাচল বৃদ্ধি, ট্র্যাফিক আইন না মানা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার এবং সড়ক অবকাঠামোর দুর্বলতায় সড়কে প্রাণহানি বাড়াচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর গঠন হয় অন্তর্বর্তী সরকার। তখন জনমানুষের মধ্যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল সড়ক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলায় উন্নতি হবে। কমে আসবে প্রাণহানি। বাস্তবতা হলো, এ সরকার এক বছরে দেশের সড়ক পরিবহন খাতে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। ফেরেনি ট্র্যাফিক শৃঙ্খলা। কমেনি যানজট ও দুর্ঘটনাও। প্রাণহানিও কমেনি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিল্লিতে একসময় প্রচুর যানজট লেগেই থাকত। সেখানে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গণপরিবহণ ব্যবস্থা যাত্রীবান্ধব হয়েছে। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনাও হ্রাস পেয়েছে। ঢাকার যানজট নিরসনে গণপরিবহণে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং নাগরিকদের দুর্ভোগ কমাতে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করি।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button