সম্পাদকীয়

নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করুন খেলার মাঠ

রাজধানী ঢাকায় শিশুদের জন্য উন্মুক্ত ও নিরাপদ খেলার জায়গা ক্রমেই কমে আসছে। একসময় বিকেল হলেই ছোট ছোট পা ছুটে যেত মাঠের দিকে বল নিয়ে, সাইকেল নিয়ে। তখন নগরীর অলিগলিতে, স্কুলের পাশে, বাসার সামনে এমন ছোট ছোট খেলার জায়গা ছিল। আজ সেই দৃশ্য শুধুই স্মৃতি। একসময় যে মাঠগুলোতে শিশুরা খেলত, আজ তার অনেকটাই দখল হয়ে গেছে নির্মাণাধীন ভবন, বাজার, ক্লাব বা পার্কিং জোনে। আর যেটুকু আছে, তা-ও শিশুদের জন্য নয়, সেখানে চলছে বড়োদের খেলা কিংবা ঘুরে বেড়ায় কুকুর অথবা মাঠভর্তি জঞ্জাল। শিশুদের খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত ও নিরাপদ জায়গার সংকট দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে। বিশাল দালান, শপিংমল, পার্কিং স্পেসের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। শুধু ধুলোবালি নয়, এখন শিশুরা শ^াস নেয় ইট, বালি আর যন্ত্রচালিত শহরের কংক্রিটে। হাঁটাচলা, খেলাধুলা, নির্মল নিশ^াস নেওয়া থেকে শুরু করে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য এই উন্মুক্ত স্থানগুলো অপরিহার্য। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, সরকারি সম্পত্তি হওয়া সত্ত্বেও ঢাকার বেশির ভাগ মাঠ ও পার্ক প্রভাবশালী মহলের দখলে চলে গেছে। উচ্চ আদালতের একাধিক নির্দেশনা এবং চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পরও এ পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন আসেনি। অভিজাত ধানমন্ডি এলাকার জনগণের জন্য তৈরি করা খেলার মাঠটি এক দশকের বেশি সময় বেদখল। অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে স্থায়ী অবকাঠামো। বাণিজ্যিকভাবে ফুটবল, ক্রিকেট ও টেবিল টেনিস খেলার কোচিং করানো হয়। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে শেখ জামাল ক্লাবের নামে ওই বাণিজ্যিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের পর শেখ জামাল নাম পরিবর্তন করে ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব করা হয়েছে। ক্লাবটি ঘিরে সবকিছু চলছে বহাল তবিয়তে। মাঠ দখলের বৈধতা পেতে এর ইজারা নিতে ধানমন্ডি সোসাইটি নতুন করে চেষ্টা শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এই দখলদারির সংস্কৃতি নাগরিক জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। শিশুরা খেলার জায়গা পাচ্ছে না, বয়স্করা হাঁটার সুযোগ হারাচ্ছেন। এর কারণে শহরগুলো কেবল কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হচ্ছে, যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিবেশবাদীদের বক্তব্য, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হচ্ছে না। জনগণের আন্দোলনের ফলস্বরূপ পরিবর্তন এলেও মাঠ ও পার্কের দখলদারির ক্ষেত্রে তার কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। এর কারণ, দখলদারেরা শক্তিশালী এবং রাজনৈতিক মহলের ছত্রছায়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে অবিলম্বে মাঠ ও পার্কের অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদে কঠোর জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন কঠোর করতে হবে, যাতে দখলদারেরা কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button