ঢাকার ফুটপাত পথচারীবান্ধব হবে কবে?

পথচারীদের নির্বিঘেœ হাঁটাচলার জন্য একটি ফুটপাতের আদর্শ প্রশস্ততা ধরা হয় অন্তত দুই মিটার। যদিও ঢাকা মহানগর এলাকায় যত ফুটপাত আছে, তার প্রায় ৬৮ শতাংশেই এ ন্যূনতম প্রশস্ততা নেই। অবৈধ দখল, পার্কিং, ভাঙাচোরা দশা আর অপরিচ্ছন্নতার কারণে ঢাকার ফুটপাতে হাঁটা কঠিন। উন্নত পশ্চিমা বিশে^র সঙ্গে তুলনা দূরে রেখে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর শহরের দিকে তাকালেও দেখা যায় পরিচ্ছন্ন, সমতল, নিরাপদ ফুটপাতে হেঁটে চলেছে হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশু। ঢাকার নানা জাঁকজমক বাড়লেও ফুটপাত দিন দিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠছে। অন্যদিকে বিভিন্ন কারণে বাড়ছে পথচারীর সংখ্যা। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) তথ্য বলছে, বর্তমানে ঢাকা মহানগর এলাকার ৩৮ শতাংশ মানুষ হেঁটে গন্তব্যে যান। ২০০৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ২০ শতাংশ। অর্থাৎ গত দেড় দশকে হেঁটে গন্তব্যে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মূলত যানজট ও গণপরিবহন সংকটের কারণে মানুষ বাধ্য হয়ে ‘খারাপ’ ফুটপাত দিয়েই হাঁটাচলা করছেন। ফুটপাত দখল করে দোকান ছাড়াও রাজধানীর প্রেসক্লাব, পুরানা পল্টন, মতিঝিল, কাকরাইল, মালিবাগ, মগবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, ফার্মগেট, শ্যামলী, মিরপুর, গাবতলী, সায়েদাবাদ, বনানীসহ অনেক এলাকায়ই রয়েছে বাসের টিকিট কাউন্টার। এসব কাউন্টারের জন্য পথচারীরা ফুটপাত দিয়ে ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। ‘ফুটপাত আর সড়কের সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। পথচারী ফুটপাতে হাঁটতে না পারলে রাস্তা দিয়ে হাঁটবে। এতে একদিকে দুর্ঘটনা বাড়ছে, অন্যদিকে যানজটও তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে,নগরীর পায়ে হাঁটার পথগুলো পথচারীবান্ধব না হওয়ায় স্বল্পদূরত্ব পাড়ি দিতে অনেকেই গণপরিবহন ব্যবহারে বাধ্য হন। অথচ ফুটপাতগুলো পথচারীবান্ধব হলে পায়ে হেঁটে স্বাচ্ছন্দ্যে এই পথ অতিক্রম করতেন অনেকেই । আর তাতে করে সড়কের উপর যানবাহনের চাপও কমতো অনেক। মাঝেমধ্যে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানো হয় বটে। তখন অন্তত দিন কয়েকের জন্য হলেও ফুটপাতগুলো পথচারীর চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠে; কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই পুনরায় বেদখল হয়ে যায় উদ্ধারকৃত ফুটপাত। এ যেন চোর-পুলিশ বা রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা এবং এই খেলা চলছে মান্ধাতা আমল থেকে। মনে রাখতে হবে, যানজটে স্থবির নগরীতে ফুটপাতগুলোই পথচারীদের প্রধান ভরসা! সুতরাং, ফুটপাত বিক্রি, লিজ বা ইজারা দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে: তোলাবাজ-মাসোহারাবাজদের দৌরাত্ম্য থামাতেই হবে।