মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিন

সবজির বাজারে অস্থিরতা
জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির এই সময়ে নি¤œ আয়ের মানুষের খাদ্য তালিকা থেকে মাছ ও মাংস অনেকটাই বাদ পড়েছে। একমাত্র ভরসা ছিল শাক-সবজি। কিন্তু সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতিতে সেটিও হয়ে উঠেছে বিলাসিতা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সবজির দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে দৈনন্দিন খাবারের চাহিদা পূরণ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। রাজধানীর বাজারে এখন বেশিরভাগ সবজির কেজিপ্রতি দাম ১০০ টাকার ওপরে। হাতে গোনা কয়েকটি সবজি ছাড়া অন্য সবজির দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। ক্রেতারা জানাচ্ছেন, কিছুদিন আগেও যেসব সবজি ৭০-৮০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন তা কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকায়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সবজির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে দুর্বল বাজার ব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব, একাধিক হাতবদল, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, চাঁদাবাজি এবং অতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতা। আশঙ্কার বিষয় হলো, বাজারে সবজির দাম বাড়লেও উৎপাদক কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। ঢাকার বাজারে যে দামে সবজি বিক্রি হয়, কৃষক তার এক-চতুর্থাংশও পান না। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কৃষকরা প্রথমে স্থানীয় বাজারে সবজি নিয়ে আসেন। সেখানে ফড়িয়া ও পাইকারদের সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকে। তারা সম্মিলিতভাবে দাম নির্ধারণ করে কৃষকদের কাছ থেকে মণ হিসেবে সবজি কিনে নেয়। এরপর ট্রাক বা পিকআপে করে রাজধানীতে আসে সবজি। রাজধানীতে আরও কয়েকবার হাতবদল হয়ে তা খুচরা বিক্রেতাদের হাতে পৌঁছায়। এই হাতবদলের প্রতিটি ধাপে দাম বাড়ে, অথচ কৃষক থেকে ক্রেতা পর্যন্ত কেউই লাভবান হন না- ফায়দা লুটে মধ্যস্বত্বভোগীরা। প্রান্তিক কৃষকরা বারবার বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ‘কৃষি বিপণন’ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। অনলাইন ও অফলাইন উভয় প্ল্যাটফর্মে কৃষি বিপণন কার্যক্রম সম্প্রসারণের পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনায় কাক্সিক্ষত সংস্কার আনতে হবে। বর্তমান বাজার কাঠামোতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমিয়ে বাজার ব্যবস্থাকে কৃষকের অনুকূলে আনলে উভয় পক্ষই লাভবান হবে। কৃষক ন্যায্য দাম পাবেন, ভোক্তাও সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে পারবেন। উৎপাদক ও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় সরবরাহ ব্যবস্থাকে সহজ ও নিরবচ্ছিন্ন করতে হবে। বাজার তদারকির কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সব ধরনের কারসাজি রোধে যথাযথ পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।