মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে জনসচেতনতা দরকার

মানসিক রোগের চিকিৎসায় বর্তমান অগ্রগতি এক কথায় বিস্ময়কর। জীবনের চাপ-তাপ, অত্যাচার-নিপীড়ন, অন্যায়-অবিচার, ব্যর্থতা সব মানুষ সমানভাবে গ্রহণ করতে পারে না, তাই মানসিক রোগী হয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলিত ও উপেক্ষিত। যার ফলে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এখন একটি বড়ো জনস্বাস্থ্য ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৮-১৯ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক কোনো না কোনোভাবে মানসিক রোগে ভুগছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে ডিপ্রেশন (বিষণœতা) ও অ্যাংজাইটি (উদ্বেগ)। শিশু-কিশোরদের মধ্যে এ হার ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু চিকিৎসা নিচ্ছেন খুবই কমসংখ্যক মানুষ। জরিপে দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ও ৯৪ শতাংশ শিশু কখনোই মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসেনি। তারা না খায় ওষুধ, না কাউন্সেলিং করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত পরিশ্রম, কম পারিশ্রমিক, কর্মী ছাঁটাই, কর্মক্ষেত্রে অসন্তুষ্টি, সহকর্মীদের অসহযোগিতা, দারিদ্র্য ও সামাজিক অবস্থান হারানোর ভয়ে মূলত কর্মীরা বিষণœতায় ভোগেন। কর্মক্ষেত্রে প্রতি পাঁচজনে একজন মানসিক সমস্যায় ভোগেন। আর তাদের মধ্যে গুরুতর মানসিক অসুস্থতার জন্য ৮০ শতাংশ কাজ হারান। বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। যদিও বাংলাদেশের মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষের এই রোগে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। অথচ পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও সচেতনতার অভাবে তারা সাহায্য নিতে পারেন না। ভয়ংকর তথ্য হলো, এসব মানসিক রোগে আক্রান্ত ৯২ শতাংশ রোগী কোনো চিকিৎসা নেন না। এতে বলা হয়েছে, মানসিক রোগ নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড়ো বাধা কুসংস্কার। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা অনুপস্থিত। তারা অনেকেই কুসংস্কারে বিশ^াসী। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রায় অপ্রাপ্য। একদিকে প্রশিক্ষিত জনবল কম, অন্যদিকে সামাজিক কুসংস্কার ও লজ্জার সংস্কৃতি মানুষকে চিকিৎসা নিতে নিরুৎসাহিত করছে। যারা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, তাদের চিকিৎসা নেওয়ার হার অত্যন্ত কম। তাই চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি বড়ো ফাঁক রয়ে গেছে। জাতীয় স্বাস্থ্য বাজেটে মানসিক স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার না দেওয়ায় চিকিৎসা অবকাঠামো ও মানবসম্পদ তৈরি করা যাচ্ছে না। পারিবারিক ও সামাজিক সহানুভূতির অভাব মানসিক রোগীদের আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলছে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সকল প্রকার কুসংস্কার দূর এবং উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলার পদক্ষেপ প্রয়োজন। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকে চিকিৎসা গ্রহণে দ্বিধান্বিত থাকেন। এই বিষয়ও সরকারকে সুরাহা করতে হবে।