কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন

বাড়ছে অবৈধ অস্ত্র
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আজ এক ভয়াবহ মোড় নিয়েছে। প্রতিদিনের খবরের শিরোনামে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি যেন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীর তীরে, মহাসড়কের পাশে কিংবা জনবিচ্ছিন্ন ঝোপঝাড়ে পাওয়া যাচ্ছে মৃতদেহ। এসব ঘটনার পেছনে একটি ভয়ংকর বাস্তবতা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে, তা হলো- অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের অবাধ বিস্তার। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের সাতটি পথ হয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে ঢুকছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। চট্টগ্রামের পাহাড়ি ও উপকূলীয় এলাকায় গড়ে উঠেছে গোপন অস্ত্র বাজার। দেশি-বিদেশি অস্ত্রের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে এলজি, পাইপগান, ওয়ান শ্যুটার গান ও একনলা বন্দুক। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ১৭০ জন, যার মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধশতাধিক। খুলনা, কক্সবাজার, রাঙামাটি, এমনকি রাজধানী ঢাকাও আজ অস্ত্রের ছায়ায় আতঙ্কিত। অপরাধীদের হাতে অস্ত্র থাকায় তারা হয়ে উঠছে আরও বেপরোয়া। মাদক কারবারিরা আধিপত্য বিস্তারে অস্ত্র ব্যবহার করছে। খুলনায় গত ১৪ মাসে সংঘটিত ৩৮টি খুনের মধ্যে ৩৪ শতাংশ ঘটনার পেছনে ছিল মাদক সংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্ব। পাহাড়ে অস্থিরতা বাড়ছে, যেখানে মায়ানমার থেকে আসা অস্ত্রের একটি বড় অংশ যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা। গত বছরের ৫ আগস্টের সহিংসতায় দেশের ৪৬০টি থানা ও ১১৪টি ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে লুট করা হয় ১,৩৫০টি অস্ত্র। এসব অস্ত্রের অধিকাংশই এখনো উদ্ধার হয়নি। একই সময়ে জেলখানায় হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায় বহু অপরাধী, যাদের অনেকেই এখনো ধরা পড়েনি। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, জামিনে মুক্ত ও বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহায়তায় গড়ে উঠছে নতুন সন্ত্রাসী বাহিনী। কিশোর ও তরুণদের নিয়ে গঠিত এসব বাহিনীর হাতে রয়েছে রিভলভার, পিস্তল, মাদক এবং ভয়ংকর পরিকল্পনা। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে অভিযান জোরদার করতে হবে। সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে হবে, অস্ত্র চোরাচালান রোধে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে অস্ত্র তৈরির কারখানা ও গোপন বাজারগুলো চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। অন্যথায়, অস্ত্রের ছায়ায় গণতন্ত্র ও নিরাপত্তা দুটোই বিপন্ন হয়ে পড়বে। এখনই সময়, কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার।