সহিংসতা কমেছে, তবে নিরাপত্তা এখনো দূরের পথ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের সাম্প্রতিক জরিপে উঠে এসেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-দেশে নারীর প্রতি স্বামীর সহিংসতা গত ১০ বছরে প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে। এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক অগ্রগতি, যা নারীর অধিকার, শিক্ষার বিস্তার ও সামাজিক সচেতনতার বৃদ্ধি নির্দেশ করে। তবে পরিসংখ্যানের পেছনের বাস্তবতা এখনো উদ্বেগজনক। জরিপ অনুযায়ী, প্রতি চারজন নারীর মধ্যে তিনজন জীবনে অন্তত একবার স্বামীর সহিংসতার শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ, সহিংসতার হার ৭৬ শতাংশ থেকে ৪৯ শতাংশে নেমে এলেও এটি এখনো সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত একটি সমস্যা। আরও উদ্বেগজনক হলো, ভুক্তভোগীদের ৬২ শতাংশ কখনোই তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেননি। এই নীরবতা কেবল ব্যক্তিগত নয়, সামাজিক ভীতির প্রতিফলন-লজ্জা, ভয়, পারিবারিক চাপে বা বিচারহীনতার আশঙ্কায় নারীরা এখনো মুখ খুলতে পারেন না। সহিংসতার কারণ বিশ্লেষণেও পাওয়া যায় সামাজিক বৈষম্যের প্রতিফলন। যৌতুক, মাদকাসক্তি, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক কিংবা দারিদ্র্য ও বস্তিবাস-সবই নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির প্রধান উপাদান। অন্যদিকে, স্বামীর উচ্চশিক্ষা সহিংসতার ঝুঁকি কমায়-এ তথ্য সমাজে শিক্ষার রূপান্তরমূলক প্রভাবের প্রতীক। তবে কমে আসা সহিংসতার হারকে চূড়ান্ত সফলতা মনে করলে ভুল হবে। কারণ ৪৯ শতাংশ নারী এখনো স্বামীর নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন-যা একটি সভ্য সমাজের জন্য অগ্রহণযোগ্য। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হওয়া নারীদের সংখ্যাও যে কম নয়, তা আমাদের সামাজিক মানবিকতার এক নির্মম চিত্র তুলে ধরে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে এই পরিবর্তনকে টেকসই করতে হলে এখন প্রয়োজন নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের আরও জোরদার প্রয়াস। আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি পরিবারভিত্তিক মূল্যবোধ শিক্ষা, ছেলেশিশুর মানসিক গঠন ও নারী-পুরুষের সমঅধিকার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। গণমাধ্যম, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগই পারে এই পরিবর্তনকে গভীর ও স্থায়ী করতে। সহিংসতা কমেছে-এটি আশার আলো। কিন্তু নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই আলো পূর্ণতা পাবে না। সমাজে সহিংসতার যে কাঠামোগত সংস্কৃতি রয়েছে, সেটি ভাঙাই এখন সময়ের দাবি। নারী যেন ভয় নয়, মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারেন-সেই সামাজিক দায়িত্ব এখন সবার।