নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিকল্প নেই

বাড়ছে বেকারত্ব
বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা দ্রুত বাড়লেও সেই অনুপাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। ফলে বেকারত্বের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, যা শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক অস্থিরতারও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিল্প-কারখানার স্থবিরতা, বিনিয়োগে মন্থরতা এবং জ্বালানি সংকট এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে। খবরে প্রকাশ, গত এক বছরে তৈরি পোশাক খাতে ১৮৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু এই খাতেই নয়, সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে আরও ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে প্রায় ১.২ লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছেন। অনেকেই গ্রামে ফিরে গেছেন, কেউ পেশা বদল করেছেন, আবার কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। ধুঁকতে থাকা কারখানাগুলো সময়মতো বেতন দিতে পারছে না, শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে, যা উৎপাদন ব্যাহত করছে। জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিদেশি ক্রেতারা আস্থা হারাচ্ছেন। পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। বিনিয়োগ না বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান হবে না, ফলে বেকারত্ব আরও বাড়বে। এই পরিস্থিতি বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৬ লাখ ২০ হাজার, যা আগের বছরের তুলনায় দেড় লাখ বেশি। প্রকৃত বেকারত্ব আরও বেশি, কারণ সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলেও তাঁকে বেকার ধরা হয় না। শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে, যা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই সংকট মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ, সহজ শর্তে ঋণ, আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত সহায়তা। পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া, প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পে বিনিয়োগ বাড়িয়ে তরুণদের জন্য নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করা যেতে পারে। কৃষি, পর্যটন, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগেও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। রাষ্ট্রের উচিত দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল পথে ফিরিয়ে আনা এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা।