বিদেশি শিক্ষার্থী হারাচ্ছে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় একসময় বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল গৌরবের বিষয়। বিশেষ করে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় (ইবি) দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই চিত্র পাল্টে গেছে। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রতিবছর গড়ে ১৫ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও, এখন সেই সংখ্যা নেমে এসেছে শূন্যে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই ভর্তি হয়নি-এটি শুধু বিশ^বিদ্যালয়ের নয়, দেশের উচ্চশিক্ষা খাতের জন্যও এক সতর্কবার্তা। দৈনিক প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে এ পর্যন্ত ইবিতে মোট ৬৯ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে ২৩ জন পড়াশোনা শেষ না করেই দেশে ফিরে গেছেন। বর্তমানে মাত্র ১৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন। এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে দেয়, ইবির শিক্ষার পরিবেশ ও প্রশাসনিক কাঠামো বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য টেকসই আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারছে না। মূল সংকটের জায়গাগুলোও পরিষ্কার-স্কলারশিপের অভাব, সেশনজট, ক্লাসে বাংলা ভাষার প্রাধান্য, পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্ব, উন্নত ল্যাব ও গবেষণার সুযোগের অভাব। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আবাসিক হলের নি¤œমান, ইন্টারনেট সমস্যা, নিরাপত্তাহীনতা, অতিরিক্ত ফি এবং নির্দিষ্ট কোনো আন্তর্জাতিক সাপোর্ট সেলের অনুপস্থিতি। ফলে যারা ভর্তি হয়েছেন, তারাও অনুপ্রেরণা হারাচ্ছেন। শিক্ষা শুধু পাঠ্যক্রমের বিষয় নয়; এটি অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি ও আস্থারও সমন্বয়। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। কিন্তু ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ে এখনো সেই পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। বিদেশি শিক্ষার্থীরা যখন বলেন, “শিক্ষকরা বাংলায় ক্লাস নেন, প্রশাসন আমাদের খোঁজ নেন না”,-তখন তা কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের নয়, আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাও প্রকাশ করে। বাংলাদেশের অনেক বিশ^বিদ্যালয় এখন আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা ও শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। ইবি যদি সেই সারিতে থাকতে চায়, তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নীতিতে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস, ইংরেজি মাধ্যমের পাঠদান, স্কলারশিপ ও আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন, এবং নির্দিষ্ট বিদেশি শিক্ষার্থী সেবা কেন্দ্র গঠন-এসব পদক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি অসম্ভব। ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় দেশের ইসলামী ও মানবিক জ্ঞানের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বিদেশি শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহ এই মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এখন সময় এসেছে আত্মসমালোচনার-কেবল বিদেশি নয়, নিজেদের শিক্ষার্থীদের জন্যও মানসম্মত, আধুনিক ও আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নইলে একসময় ইবির নাম আন্তর্জাতিক পরিসরে কেবল অতীতের গল্প হয়ে থাকবে।