সম্পাদকীয়

এখনই লাগাম টেনে ধরা প্রয়োজন

মূল্যস্ফীতির চাপে বাড়ছে দারিদ্র

দেশে দারিদ্র্য আবার বাড়ছে। সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে উঠে এসেছে এমনই উদ্বেগজনক চিত্র। যদিও একসময় দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের সাফল্য ছিল বিশ্বে অনুকরণীয়। জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত ঢাকায় এসেছিলেন সেই অর্জন উদযাপন করতে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই সাফল্য ম্লান হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা প্রভাব ফেললেও দারিদ্র্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ মূল্যস্ফীতি। টানা তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি থাকায় মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে, কমেছে তাদের ক্রয়ক্ষমতা। আয় না বাড়লেও ব্যয় বেড়েছে, ফলে দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি থাকা পরিবারগুলোও এখন দরিদ্রের কাতারে। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮.৭ শতাংশ, ২০২৫ সালের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭.৯৩ শতাংশে। অতি দারিদ্র্যের হারও ৫.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯.৩৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরেই দারিদ্র্যের হার ২১.২ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে গভীর উদ্বেগের। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থানের সংকটে শহরের পরিবারের গড় আয় কমেছে, যদিও গ্রামের আয় সামান্য বেড়েছে। পিপিআরসির তথ্যমতে, একটি পরিবারের গড় সঞ্চয় এখন মাত্র ৭০ টাকা, যা জীবনধারণের জন্য একেবারেই অপ্রতুল। নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছে ধারদেনায়। এর পাশাপাশি আয়বৈষম্যও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, বিনিয়োগের ঘাটতি এবং দারিদ্র্য হ্রাসে কার্যকর কর্মসূচির অভাবও বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এই প্রেক্ষাপটে এখনই প্রয়োজন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর নীতিমালা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিনিয়োগ ও উদ্যোগ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও বরাদ্দ বৃদ্ধি, দেশীয় উৎপাদন ও সরবরাহ চেইন শক্তিশালীকরণ এবং অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন। দারিদ্র্য নিরসনের দীর্ঘদিনের অর্জন ধরে রাখতে হলে সরকারকে এখনই সাহসী ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে। মূল্যস্ফীতির করাল গ্রাস থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়াই হওয়া উচিত আমাদের অগ্রাধিকার।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button