সম্পাদকীয়

চাঁদাবাজি-দুর্নীতির ফাঁদে কৃষক-ভোক্তা

অনিয়ন্ত্রিত সবজির বাজার

বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির মেরুদ– কৃষক আজ চরম সংকটে। অন্যদিকে, শহরের ভোক্তাও দিশেহারা। অথচ মাঠে উৎপাদিত শাকসবজি রাজধানীর বাজারে পৌঁছাতে গিয়ে যেন এক দুর্বিষহ যাত্রা পাড়ি দেয়। এই যাত্রাপথে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও বাজার তদারকির ব্যর্থতা মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক ভয়াবহ চক্র, যার শিকার হচ্ছেন কৃষক ও ভোক্তা উভয়েই। এই সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি নৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। রাজধানীর বাজারে সবজির দাম যখন তিন থেকে চার গুণ পর্যন্ত চড়া, তখন কৃষক পাচ্ছেন না ন্যায্যমূল্য। মাঠ থেকে শহরের বাজারে আসার পথে ট্রাকপ্রতি হাজার হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশ, রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙানো ব্যক্তি ও শ্রমিক সংগঠনের ছত্রছায়ায় এই চাঁদাবাজি চলছে নির্লজ্জভাবে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া শিম ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। করলা, বরবটি, ঢেঁড়স, লাউ- সবজির প্রতিটি প্রকারেই একই চিত্র। কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন, ভোক্তা কিনছেন অতিরিক্ত মূল্যে, আর লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী ও চাঁদাবাজ চক্র। এই সংকটের আরেকটি বড় কারণ বাজার তদারকির দুর্বলতা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত বাজারদরের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। ‘বাজারদর’ অ্যাপের তথ্যও বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মাঠ পর্যায়ে কার্যকর মনিটরিং না থাকায় পাইকারি ও খুচরা দামের ব্যবধান অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চাঁদাবাজি কিছুটা কমলেও বর্তমানে তা আবার পুরোদমে ফিরে এসেছে। সরকারের মনোযোগের অভাবে বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে, যা ভোক্তার অধিকারকে ক্ষুণ্ন করছে এবং কৃষকের উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করছে। এমতাবস্থায়, আমরা মনে করি, সড়কে পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি রোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে স্বচ্ছ মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ‘কৃষকের বাজার’ স্থাপন করে কৃষককে সরাসরি বিক্রির সুযোগ দিতে হবে, যাতে মধ্যস্বত্বভোগী বাদ পড়ে। বাজারদর নির্ধারণ ও প্রচারে বাস্তবভিত্তিক তথ্য নিশ্চিত করতে হবে। এই সংকটের সমাধান শুধু প্রশাসনিক নয়, এটি রাজনৈতিক সদিচ্ছারও পরীক্ষা। কৃষক ও ভোক্তা- দুই পক্ষের স্বার্থ রক্ষায় সরকারকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে সবজির বাজার হয়ে উঠবে দুর্নীতির প্রতীক, আর সাধারণ মানুষ থাকবে চরম ভোগান্তিতে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button