সম্পাদকীয়

পর্যটন উন্নয়নে বাস্তব পদক্ষেপের সময় এখনই

বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে ঘিরে সম্ভাবনার অভাব নেই। সুন্দরবন, সিলেট কিংবা পার্বত্য চট্টগ্রাম-প্রতিটি অঞ্চলই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতির ভা-ার। কিন্তু সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক পরিকল্পনা ও অবকাঠামোগত ঘাটতির কারণে এ খাত এখনো প্রত্যাশিত গতি পায়নি। সুন্দরবন বিশ^ ঐতিহ্যের অংশ, অথচ এ অঞ্চলের পর্যটন এখনো সীমিত। খুলনার মুজগুন্নীতে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের পাঁচ একর জমি দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পড়ে থাকা এই ব্যর্থতার বড় উদাহরণ। সড়ক উন্নয়ন ও আধুনিক হোটেল-মোটেল নির্মিত হলে পুরো অঞ্চল নতুনভাবে জেগে উঠতে পারত। উদ্যোক্তারা ইতিমধ্যে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় ইকো রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন, কিন্তু যোগাযোগব্যবস্থার দুর্বলতায় সেগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। এতে উদ্যোক্তারা লোকসানের মুখে পড়ছেন, আর দেশ হারাচ্ছে সম্ভাব্য রাজস্ব। একই চিত্র সিলেটেও। পর্যটন নগর হিসেবে খ্যাত এ অঞ্চল এখন পর্যটকদের জন্য ক্রমেই অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে। ভাঙাচোরা সড়ক, সীমিত রেলসুবিধা, ব্যয়বহুল আকাশপথ-সব মিলিয়ে ভ্রমণ অনিরাপদ ও ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে সাদাপাথর লুটপাটকা- যোগ হয়ে সিলেটের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একাধিকবার মহাপরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নের উদাহরণ নেই বললেই চলে। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সাজেক ভ্যালি ছাড়া অন্য কোথাও বড় ধরনের অগ্রগতি নেই। বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশাধিকার সীমিত, আর আধুনিক বিনোদন সুবিধার ঘাটতিতে সম্ভাবনাগুলো অচল হয়ে আছে। অথচ কেবল কার, মানসম্মত রেস্টুরেন্ট কিংবা শিশুদের জন্য বিনোদনকেন্দ্র নির্মিত হলে স্থানীয় অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান দুই-ই বাড়ত। প্রশ্ন হলো, এ অবস্থার জন্য দায়ী কে? পর্যটন উন্নয়নের জন্য শুধু কমিটি গঠন বা মহাপরিকল্পনার খসড়া যথেষ্ট নয়। দরকার দৃশ্যমান উদ্যোগ ও সময়সীমাবদ্ধ বাস্তবায়ন। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, অবকাঠামোগত সুবিধা ও নিরাপত্তা জোরদার করলেই পর্যটক সংখ্যা বাড়বে, রাজস্ব বাড়বে এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমুখীকরণের পথে এগোতে চাইলে পর্যটন খাতকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। প্রকৃতি আমাদের বিপুল সম্পদ দিয়েছে; এখন প্রয়োজন তা কাজে লাগানোর আন্তরিকতা। সময়ক্ষেপণের অবসান ঘটিয়ে দ্রুত বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button