নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গতি আনতে হবে

বিশ^ যখন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে গিয়ে নবায়নযোগ্য উৎসের দিকে ঝুঁকছে, তখন বাংলাদেশ এখনো কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। বৈশি^কভাবে অনেক দেশে বিদ্যুতের প্রায় ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসলেও বাংলাদেশে এ হার এখনো ৬ শতাংশেরও কম। ২৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার বিপরীতে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৬২৬ মেগাওয়াট। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এ চিত্র আরও স্পষ্ট। ভারতে মোট বিদ্যুতের ২৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৭ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কায় প্রায় ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত হলেও বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের অংশ মাত্র ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। দীর্ঘসূত্রতা, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, অনুমোদন প্রক্রিয়ার বিলম্ব এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুতের ২০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে তিন হাজার মেগাওয়াট রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং একাধিক স্থলভিত্তিক সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন ব্যয়ের উচ্চহার বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে সৌরবিদ্যুতের প্রতি ইউনিট খরচ ১২ থেকে ২২ টাকার মধ্যে, যেখানে পাশর্^বর্তী দেশগুলোতে খরচ মাত্র ৪ থেকে ১০ টাকা। খরচ না কমলে সৌরবিদ্যুৎ একসময় টেকসই সমাধান না হয়ে বিদ্যুৎ খাতে বাড়তি বোঝা হয়ে উঠতে পারে। এখানে অনিয়ম, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও দক্ষ জনবল ঘাটতিও বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ^জুড়ে যেখানে সৌরবিদ্যুতের খরচ কমছে, বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে ধীরগতিতে কমছে। ফলে আমাদের বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয় নয়, এটি জ্বালানি নিরাপত্তা, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই এই খাতে বিনিয়োগ, গবেষণা, দক্ষ জনবল তৈরি এবং কার্যকর নীতি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। সরকারকে যেমন কঠোরভাবে অনিয়ম ও দুর্বলতা দূর করতে হবে, তেমনি বেসরকারি খাতকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে এখনই গতি আনা না গেলে বাংলাদেশ শুধু বৈশি^ক প্রতিযোগিতায় নয়, নিজস্ব জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়বে।