সম্পাদকীয়

কৈশোরে ধূমপান: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নীরব বিপদ

দেশে কৈশোর বয়সে ধূমপানের প্রবণতা যে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, তা সমাজ ও রাষ্ট্র উভয়ের জন্যই একটি সতর্কবার্তা। গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো সার্ভের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরদের মধ্যে ৯.২ শতাংশ ছেলে এবং ২.৮ শতাংশ মেয়ে ধূমপান করে। এ সংখ্যা কেবল পরিসংখ্যান নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও নৈতিক নিরাপত্তার প্রতি এক কঠিন হুঁশিয়ারি। কৈশোর হলো গঠনমূলক বয়স, যেখানে আচরণ, মূল্যবোধ ও জীবনের দিকনির্দেশনা তৈরি হয়। এই বয়সেই যদি তরুণ সমাজ তামাকের নেশায় জড়িয়ে পড়ে, তবে তা কেবল তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি নয়-একটি প্রজন্মের মানসিক ও সামাজিক বিকাশকেও বাধাগ্রস্ত করবে। গবেষণায় দেখা গেছে, কৈশোরে ধূমপান শুরু করলে পরবর্তী জীবনে নেশাজাতীয় অন্যান্য পণ্যের ব্যবহার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এদিকে, অধূমপায়ী শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। ঘরে ও বাইরে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে লাখো শিশু-কিশোর। প্রতিবছর ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানজনিত জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ থেকে হৃদরোগ, শ^াসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে। তবু সমাজে ধূমপানকে এখনো ‘ব্যক্তিগত অভ্যাস’ হিসেবে দেখা হয়, জনস্বাস্থ্য ইস্যু হিসেবে নয়। সেমিনারে বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাবিত ছয় দফা নীতিগত সুপারিশগুলো সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত। বিশেষ করে-সব পাবলিক স্থানে ধূমপানের নির্ধারিত স্থান বাতিল, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা এবং তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতার আড়ালে প্রচারণা রোধ করা জরুরি পদক্ষেপ। পাশাপাশি ই-সিগারেট ও ভেপিং নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর আইন প্রণয়ন সময়ের দাবি। সরকার ইতিমধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, তবে তার বাস্তবায়নে গতি আনতে হবে। স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে পাঠ্যক্রমে তামাকবিরোধী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। অভিভাবক ও শিক্ষক-দু’পক্ষেরই ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা শিশুর অভ্যাস গঠনে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। বর্তমানে দেশে প্রায় তিন কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে এবং প্রতিবছর এক লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ তামাকজনিত কারণে অকালে মারা যায়। এই ভয়াবহতা রোধ করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ। তামাকবিরোধী প্রচারণা যেন কেবল একটি স্বাস্থ্যনীতি নয়, বরং একটি সামাজিক আন্দোলন হয়ে ওঠে-এটাই এখন সময়ের দাবি। কারণ আজ যারা কৈশোরে ধূমপান শুরু করছে, আগামী দিনের নেতৃত্ব তাদের হাতেই থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button