সম্পাদকীয়

আরব আমিরাতের নিঃস্ব প্রবাসীদের পাশের্^ দাঁড়াতে হবে

সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধ প্রবাসীদের ওপর অভিযান বেড়েছে। গত বছর যারা সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা এখন বিপাকে পড়েছেন। দেশটির সরকার তাদের আটক করে নির্দিষ্ট কারাভোগ শেষে নিজ দেশে নির্বাসনে পাঠাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক বাংলাদেশি দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন। দেশে ফেরা প্রবাসীরা অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় স্পন্সরদের যথাযথ অর্থ প্রদানের পরও ভিসা নবায়ন হয়নি। ফলে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা অবৈধ হয়ে পড়েন। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দূতাবাসের আউটপাস নিয়ে ৫০২ জন দেশে ফিরেছেন। আগস্টে ফেরেন ১৮৪ জন। আর সর্বশেষ ৯ দিনে আউটপাসের মাধ্যমে নির্বাসিত হয়েছেন ৭৯ বাংলাদেশি। নির্বাসিতদের মধ্যে যাদের সঙ্গে পাসপোর্ট ছিল, তাদের তথ্য দূতাবাসে নথিভুক্ত হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুবাই ও উত্তর আমিরাতে ছয়টি প্রদেশ। সেখান থেকে নির্বাসিত বাংলাদেশির সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। বাংলাদেশ মিশনের তথ্যে, আমিরাতে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসের দেওয়া সাধারণ ক্ষমায় প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি নিজের বৈধতা নিশ্চিত করেন। বৈধতা পেতে দুটি বাংলাদেশ মিশন থেকে ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন প্রায় ৬১ হাজার বাংলাদেশি। এমআরপি পাসপোর্ট নিয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার। একই সময় ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করে দেশে ফিরেছেন পাঁচ হাজার ৬৫৭ বাংলাদেশি। আমরা জানি, বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের প্রায় সকলে দেশে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন। তাদের অধিকাংশকে সেই অভিবাসন ব্যয় সংগ্রহ করতে হয় উচ্চ সুদে ঋণ কিংবা পরিবারের শেষ সম্বল ভিটা-জমি বিক্রয় করে। ফলে যেই কোনো অভিবাসী শ্রমিককে চাকরি হারিয়ে শূন্য হাতে দেশে প্রত্যাবর্তন করার অর্থ সংশ্লিষ্ট পরিবারেও বিপর্যয় নেমে আসা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা নবায়নে ব্যর্থ বাংলাদেশি অভিবাসীদের উপর যেই নিপীড়ন চলছে, তা উদ্বেগজনক। আরব আমিরাতের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সমাজের জন্যও উদ্বেগজনক হতে বাধ্য। কারণ মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার যেই সকল দেশ বাংলাদেশের অধিকাংশ শ্রমিকের গন্তব্যরূপে সুপরিচিত, আরব আমিরাত তাদের শীর্ষস্থানীয়। বিশেষত মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অপেক্ষাকৃত লোভনীয় হওয়ার কারণে বিপুল তেলসমৃদ্ধ দেশটির প্রতি অভিবাসী শ্রমিকদের রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ। দালালের প্রতারণার কারণে যুগ যুগ ধরে অসংখ্য লোক উন্নত জীবনের আশায় বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে সর্বস্ব হারালেও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার লোকেরা ভুক্তভোগীকে উদ্ধারে অগ্রসর হন না, তেমনি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোও এই ব্যাপারে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে না। এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকা কে অবিলম্বে আমিরাতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের পাশের্^ দাঁড়াতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button