দেশের আবাসন সংকট দূর হোক

বাংলাদেশে বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ এখনো স্থায়ীভাবে গৃহহীন। কেউ বাস করছে অস্থায়ী ঘরে, কেউ রাস্তাঘাটে, কেউবা নদীতীরে ভাসমান জীবনযাপন করছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, ভূমিসংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের বসতিসংকট দিন দিন আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ বাস করে। রাজধানী ঢাকায় এ সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, দেশের শহুরে জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ বস্তি বা অনানুষ্ঠানিক বসতিতে বাস করছে। ঢাকার করাইল, যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাজার, মিরপুর ও গাবতলীর মতো এলাকাগুলোতে অগণিত পরিবার বসবাস করছে অস্বাস্থ্যকর, অপর্যাপ্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে। অন্যদিকে গ্রামীণ এলাকায় নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কারণে প্রতিবছর গড়ে ১৫ হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। তারা জীবিকার সন্ধানে শহরে চলে আসে, ফলে শহরের ওপর বাড়ছে বসতি ও অবকাঠামোগত চাপ। বাংলাদেশে নগরায়ণ দ্রুত বাড়ছে। ১৯৬০ সালে যেখানে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করত, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৪৭ শতাংশে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৫০ সালে দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ শহরে বাস করবে। বর্তমানে দেশের জিডিপির প্রায় ৬৫ শতাংশই আসে নগর এলাকা থেকে। প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নতুন করে ঢাকায় আসছে। বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা আরও বেশি। কিন্তু এই নগরায়ণ মূলত অপরিকল্পিত এবং ঢাকাকেন্দ্রিক। ফলে রাজধানীতে আবাসনের সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মধ্যবিত্তের জন্যও ঢাকায় নিজস্ব ফ্ল্যাট বা আবাসনের স্বপ্ন এখন অনেকটাই অধরা হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সংকটের মূলে রয়েছে সরকারি নীতি ও বাস্তবায়নের মারাত্মক ত্রুটি। সরকারের পক্ষ থেকে নি¤œ-আয়ের মানুষের জন্য নেওয়া প্রকল্পগুলো ধনীদের কবজায় চলে যাচ্ছে। বাস্তবিকই, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের মতো সংস্থাগুলো যে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, উচ্চমূল্যের কারণে বাস্তুহারা, দরিদ্র কিংবা নি¤œবিত্তরা তার নাগাল পাচ্ছে না। সরকারি আবাসন সুবিধার সুবিধাভোগী হচ্ছে মূলত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সম্পদশালী ব্যক্তিরা, যাদের অনেকের একাধিক ফ্ল্যাট বা প্লট ইতোমধ্যেই রয়েছে। এ প্রবণতা কেবল আবাসন বৈষম্যই বাড়াচ্ছে না, বরং সরকারের সদিচ্ছার প্রতিও প্রশ্ন তুলছে। দেখা যায়, সরকার সস্তায় জমি অধিগ্রহণ করে আবাসন প্রকল্প তৈরি করছে; কিন্তু সেই সুবিধা ভোগ করছে এক বিশেষ শ্রেণির বিত্তবানরা-যা দেশের আবাসন নীতিকে পুরোপুরি বিকলাঙ্গ করে তুলেছে। কাজেই সরকারি প্রকল্পের সুবিধা যেন প্রকৃত দুস্থদের কাছে পৌঁছায়, সে জন্য কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করাও অপরিহার্য।
