সম্পাদকীয়

প্লাস্টিক রিসাইক্লিং দ্বারা পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হবে

পরিবেশে পচনরোধী প্লাস্টিকজাতীয় দ্রব্য, উপজাত, কণিকা বা প্লাস্টিকের দ্রব্য নিঃসরিত অণুর সংযোজন; যা মাটি, পানি, বায়ুম-ল, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও মানবস্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাকে সাধারণভাবে প্লাস্টিক দূষণ বলা হয়। প্রাত্যহিক জীবনে আমরা যা ব্যবহার করি, তার অধিকাংশই প্লাস্টিকের তৈরি। প্লাস্টিক হচ্ছে কৃত্রিমভাবে তৈরি পলিমার, যা মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়। প্লাস্টিক সাধারণভাবে নমনীয় (সহজে বাঁকানো যায়), ক্ষয়রোধী, দীর্ঘস্থায়ী ও সস্তা। প্লাস্টিক এখন নিত্যব্যবহার্য পণ্য। এই অপচনশীল পণ্য যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে পরিবেশদূষণ ও প্রাণিবৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন। এছাড়া প্লাস্টিক কণা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। পলিথিনও একপ্রকার প্লাস্টিক পণ্য। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকজাত পণ্য বা পলিথিন ব্যাগ শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়েই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাবারের প্যাকেট বা মোড়ক হিসেবে প্লাস্টিকের জয়জয়কার। পানির বোতল, কোমল পানীয়, জুস, আটা-ময়দা, তেল, চাল, ঘিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশিরভাগ পণ্য এখন প্লাস্টিকের চাদরে বন্দি। বলতে গেলে ঘরের চেয়ার-টেবিলসহ বেশির ভাগ আসবাবপত্র এখন প্লাস্টিকের তৈরি। এছাড়া সর্বত্রই পলিথিন ব্যাগের ছড়াছড়ি। পরিবেশের এই অপচনশীল নীরব শত্রু প্রতিনিয়ত পরিবেশের ক্ষতি করে চলেছে। এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে মোট ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ৭৯ শতাংশ মাটিতে, ১২ শতাংশ পুড়িয়ে এবং মাত্র ৯ শতাংশ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। অর্থাৎ ৭৯ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্যই দীর্ঘদিন পরিবেশে থেকে যায়। তাই শুধু পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কৌশলের যথাযথ বাস্তবায়ন হলে প্লাস্টিক কোনো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। বরং রিসাইক্লিং করে বিপুল অর্থ সাশ্রয় করতে পারবে। মাথাপিছু জিডিপি বৃদ্ধির পাশাপাশি প্লাস্টিকের ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। রিসাইক্লিংয়ের কারণে বর্তমানে প্রতি বছর ডিসিসি এলাকায় বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। ফলে প্লাস্টিক আমদানি হ্রাস পাওয়া ছাড়াও মহানগরীতে ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর সব দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার আছে। তবে উন্নত দেশে প্লাস্টিকের রিসাইক্লিং প্রক্রিয়াও বেশ উন্নত। ফলে পৃথিবীর উন্নত দেশে প্লাস্টিকের দূষণ কম। তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্যের বাজার রয়েছে। একজন নাগরিক মাথাপিছু ৯ কেজির বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার করেন। দেশে ব্যবহূত প্লাস্টিকের মাত্র ৩৬ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়। বেশিরভাগ প্লাস্টিক পণ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব হয় না। যেসব কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান কোমল পানীয় বা পানির বোতল ও অন্য যেসব প্লাস্টিক পণ্য বিক্রয় করে থাকে সেই সব পণ্য ব্যবহার শেষে সেই কোম্পানিকে আবার ফিরিয়ে নেয়ার (ভোক্তাদের সামান্য মূল্যের বিনিময়ে) ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে দেশি ও বিদেশি প্লাস্টিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বসে নীতিমালা করা দরকার।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button