নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হওয়া জরুরি

নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনীতিতে উত্তেজনা, অনিশ্চয়তা ও সম্ভাব্য সংঘাতের আভাস স্পষ্ট হচ্ছে। অর্থনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় নির্বাচন যে জরুরি হয়ে পড়েছে, সে ব্যাপারে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ঘোষিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যে-কোনো বাধা দূর করা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘোষিত সময়ে নির্বাচন না হলে, দেশে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কাও আছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সবার আগে এই বাস্তবতাকে উপলব্ধি করা জরুরি। বর্তমান অনিশ্চয়তা শুধু রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তার গভীর নেতিবাচক প্রভাব সমাজ ও অর্থনীতির ওপরও পড়ছে। দারিদ্র্য, বেকারত্ব বাড়ছে এবং অর্থনৈতিক-সামাজিক ও জীবিকায় দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি হচ্ছে। সবার আগে এই অনিশ্চয়তা কাটানো প্রয়োজন। একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে যাত্রাই এর একমাত্র পথ বলে মনে করি। আমরা মনে করি, চাপিয়ে দিয়ে সংস্কার হয় না। আবার পরিবর্তনের অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় যাওয়ার পর তার বাস্তবায়নও হয় না। এই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটা বাস্তবসম্মত পথ খুঁজে বের করতে হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন করতে হলে হাতে সময় খুবই কম, পাঁচ মাসেরও কম। নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্যে দ্রুত প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সাধারণ মানুষের চিন্তা-ভাবনায়ও সংসদ নির্বাচন ক্রমেই বড়ো স্থান করে নিচ্ছে। এই অবস্থায় কয়েকটি দলের নানা ধরনের শর্তারোপ, বক্তব্য-বিবৃতি ও কর্মসূচি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তো বটেই, প্রধান উপদেষ্টা নিজেও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন না হলে দেশে বড়ো ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে এবং জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। আমরা আশা করি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর যে মতভিন্নতা, তা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই একটা সমঝোতায় পৌঁছাবে। আমরা চাই ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে সবাই অংশ নিক। দেশকে কোনোভাবেই ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না।
