সম্পাদকীয়

প্রযুক্তি ব্যবহারে ভারসাম্য ও সঠিক দিকনির্দেশনা প্রয়োজন

তথ্যপ্রযুক্তি মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে কি না এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে না পারলেও অধিক প্রযুক্তি ব্যবহারে মানুষের মেজাজ বদলে দেওয়ার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অধিক ব্যবহার করলে আত্মবিশ^াস কমে নিজেকে অযোগ্য মনে হতে পারে। অনলাইনে সবাই নিজের সেরা ছবি আর ইতিবাচক ঘটনার খবরই সাধারণত সবাইকে দেখান। এ ছাড়া বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে অনেক ছবি সম্পাদনার মাধ্যমে নিখুঁত আদর্শ হিসেবে প্রচারিত হয়। এ ধরনের অজ¯্র ছবি দেখা হলে তা মস্তিষ্কের অ্যামিগডালার মতো অঞ্চলের কিছু ¯œায়ুজালিকা সক্রিয় করে। সেই ¯œায়ুজালিকা ভয় ও দুশ্চিন্তার সঙ্গে জড়িত। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েরা তাদের মায়েদের খুদে বার্তা পাঠালে তাদের মধ্যে কর্টিসোল হরমোন উৎপন্ন হয়। কর্টিসোল হরমোন মানসিক চাপের জন্য দায়ী, যেখানে তৈরি হওয়ার কথা ছিল ভালো অনুভূতি উদ্রেককারী অক্সিটোসিন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমরা প্রিয় মানুষদের সাহচর্যে একটি ন্যূনতম সময় কাটানোর জন্য অভিযোজিত। মানুষের পরস্পর আবেগীয় মিথস্ক্রিয়া না হলে তা শারীরিক বা মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অধিক আসক্তি আমাদের সরাসরি মিথস্ক্রিয়ার সময় কমিয়ে দেয়। স্মৃতির ওপর প্রযুক্তির প্রভাব কী, এটা অবশ্য পরিষ্কার নয়। দিনকে দিন আমরা ফোন নম্বর ও অন্যান্য ছোটোখাটো তথ্য মনে করার জন্য স্মার্টফোন ও সার্চ ইঞ্জিনের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। এটাকে অনেকে ইতিবাচক, অনেকে নেতিবাচকভাবে দেখেন। আমরা যদি ব্যক্তিগত জীবনেও তাকাই, দেখি আগে অবসর মানেই ছিল বই পড়া, ডায়েরি লেখা, গল্প ভাবা কিংবা বন্ধুর সঙ্গে সরাসরি কথা বলা। এগুলো আমাদের সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে রাখত, কারও সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলার মাধ্যমে আমরা নানা কিছু জানতে পারতাম, নানারকম মনোভাব তৈরি হতো। এখন অবসর মানেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটানো। সেখানে আমরা মূলত ভোক্তা। অন্যের তৈরি লেখা, ছবি, ভিডিও ভোগ করছি। ফলে আমাদের কল্পনাশক্তির ব্যবহার দিন দিন কমে আসছে। প্রযুক্তি আসলে আমাদের কল্পনাশক্তি কেড়ে নিচ্ছে না; বরং আমাদের অপব্যবহারের কারণে কল্পনাশক্তি হারাচ্ছে। প্রযুক্তি সঠিক ব্যবহার হতে পারে সৃজনশীলতার হাতিয়ার আবার ভুল ব্যবহার হয়ে উঠতে পারে কল্পনার শত্রু। তাই প্রয়োজন সচেতনতা। কল্পনার বিকাশই আমাদের চিন্তা, মানবিকতা এবং সৃজনশীলতার মূল। কল্পনাশক্তি বৃদ্ধির জন্য শিশুদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর মনোভাব তৈরি করতে হবে, বাবা-মায়েদেরও তাদের ব্যস্ততার মধ্যেই সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, খেলা করা, গল্প বলার অভ্যাস তৈরি করা প্রয়োজন। পাশাপাশি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও কিছু কার্যক্রম রাখা প্রয়োজন, যা শিক্ষার্থীদের কল্পনাশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button