নারীর অধিকার নিশ্চিতকরণ জরুরি

নারী-পুরুষ একে অন্যের আভরণস্বরূপ। আভরণ মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, দুর্যোগ ও দুর্বিপাক থেকে রক্ষা করে, লজ্জা নিবারণ করে। তাই পোশাক-পরিচ্ছেদ মানুষের জীবনধারণের জন্য যেমন অপরিহার্য, তেমনি নারী-পুরুষ পরস্পরের জন্য অতীব জরুরি। একজন ছাড়া আরেকজন চলতে পারে না। বিপদাপদ, জরা-মৃত্যু ও দুর্যোগ-দুর্বিপাকে একজন আরেকজনের সহায়ক ও রক্ষাকারী। একজন আরেকজনের প্রেরণাদানকারী। পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহায়তাকারী। সন্তান লালন-পালনে সহযোগী। দুঃখ-কষ্টে একসঙ্গে ভোগকারী। কার্যসম্পাদনে সাহায্যকারী। মানব প্রজন্মের ধারাবাহিতাও উভয়ের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই প্রবহমান। সুতরাং একজন থেকে আরেকজনকে পৃথক করে কিংবা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বরং পারিবারিক ¯েœহ-মমতা, আদর-আপ্যায়ন, শান্তি-শৃঙ্খলা সন্তান গর্ভেধারণ ও লালন-পালন ইত্যাদির দিক দিয়ে যদি বিচার করা হয়, তাহলে দেখা যাবে এসব বিষয়ে স্ত্রীর অবদান স্বামীর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি; যা কোনো সময়ই অর্থের মানদ-ে বিচার করা যাবে না। মেয়েদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর সর্বত্রই পুরুষের আধিপত্য বিরাজমান। প্রকৃতগণভাবেও নারী পুরুষের তুলনায় দুর্বল। তাই পুরুষের নির্যাতন ও লোলুপ দৃষ্টি থেকে নারীকে বাঁচতে হলে মেধাচর্চা এবং আর্থিক দিক দিয়ে পুরুষের তুলনায় তাদের এগিয়ে যেতে হবে। শালীনভাবে পথ চলতে হবে। কাজকর্মে দেহ আচ্ছাদিত করে চলতে হবে। যারা স্বাবলম্বী তাদের না করা যায় নির্যাতন, না করা যায় অধিকার হরণ। এটা সবাই জানেন। আর এজন্যই সবলরা দুর্বলদের কখনো সবল হতে দেন না। কেউ কাউকে স্বাবলম্বী করে দেন না। স্বাধীনতার মতো তা অর্জন করে নিতে হয়। এটি যেমন ব্যক্তির বেলায় স্যু, তেমনি রাষ্ট্র এবং নারী-পুরুষের বেলায়ও স্যু। একজন নারীর জন্ম থেকেই জীবনযুদ্ধ শুরু হয়। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে নারীদের জীবন পার করতে হয়। বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবন, সংসারজীবন এমনকি কর্মক্ষেত্রেও নানা বাধা মোকাবিলা করতে হয় নারীদের। নারীর অগ্রগতির পথে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বর্তমানে অনেক বেড়েছে। বর্তমানে গ্রামে ও শহরে নারীদের অবস্থানে বড়ো ধরনের পরিবর্তন এসেছে। অতীতে নারীদের কাজের সুযোগ খুব সীমিত ছিল। মোট জনসংখ্যার অর্ধাংশ নারী হলেও বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমবাজারে তাদের অংশগ্রহণের হার এখনও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। নারীর ওপর অত্যাচার, বৈষম্য, ধর্ষণ, নারীকে কোণঠাসা করে রাখার প্রচেষ্টা বৃহত্তর নারী সমাজকে পিছিয়ে দিচ্ছে। নারীদের চাহিদা, তাদের প্রয়োজন, তাদের দাবিগুলো উপেক্ষা করে দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। নারীর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়তে হবে। ইতিবাচক মনোভাব প্রথমে পরিবারের মধ্যে আনতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্য রোধ করতে হবে। নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
