সম্পাদকীয়

ভ্রমন ভিসার নামে মানব পাচার রোধে ব্যবস্থা নিন

মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে কাজের প্রলোভনে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের মানব পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই চক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন কয়েক হাজার বাংলাদেশি। লাখ লাখ টাকা খরচ করে দেশটিতে গেলেও কাজ না পেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। জানা গেছে, কিরগিজস্তানসহ মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দুই মাসের ভ্রমণ ভিসা দিয়ে প্রবাসী কর্মীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তাঁদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় সে দেশে যাওয়ার পর এক বছরের ভিসা দেওয়া হবে। কিন্তু দেশগুলোতে যাওয়া বেশির ভাগ কর্মী ভিসা আর পান না। এতে তাঁরা অবৈধ হয়ে গ্রেপ্তার হন এবং পরে খালি হাতেই দেশে ফিরতে হয় তাঁদের। ভুক্তভোগী কর্মীদের অভিযোগ, বাংলাদেশি দালালরা ভুয়া কাগজপাতি বের করে পাঁচ লাখ, সাত লাখ এমনকি আট লাখ টাকা নিয়ে এই কর্মীদের দেশগুলোতে পাঠিয়ে দেয়। অনেক কর্মীদের ইউরোপের স্বপ্ন দেখিয়েও নিয়ে যাওয়া হয়। জানা যায়, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে গত বছরের ৩১ মে বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এক বছরের বেশি সময় পার হলেও বাজারটি পুনরায় চালু করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। এর ফলে অবৈধভাবেই দেশটিতে একটি চক্রের মাধ্যমে বহু কর্মীকে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে কতসংখ্যক কর্মী এখন পর্যন্ত এই মানবপাচারের শিকার হয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও দেশটিতে বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা এবং বিমানবন্দর থেকে পাঠানোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত কয়েক শতাধিক কর্মী ভ্রমণ ভিসার নামে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। তাঁদের মধ্যে কাউকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, আবার কাউকে বিভিন্ন অভিযানে গ্রেপ্তার করে সাজা দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈধভাবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু করা সম্ভব না হলে কর্মীদের এভাবে মালয়েশিয়া যাওয়া বন্ধ করা সম্ভব হবে না। আর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু করতে হলে সিন্ডিকেটের শর্ত মেনেই চালু করতে হবে। এর ফলে বাজারটি সহজেই চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে অবৈধভাবে মানবপাচারের শিকার হয়ে কর্মী যাওয়া বন্ধে মন্ত্রণালয় থেকে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। ‘মানব পাচারের চক্রগুলো শুধু তো আমাদের দেশে সক্রিয় নয়, বোঝা যাচ্ছে, এদের একটা আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক আছে। তার মধ্যে বাংলাদেশিও রয়েছে, অন্যান্য দেশের পাচারকারীচক্র রয়েছে। এগুলোর ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তার জন্য আন্তর্জাতিক কিছু প্রক্রিয়া লাগবে। যে দেশ বা যে প্রবেশ পথগুলো মানবপাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে, সে দেশের সরকারের সঙ্গে একটা সমঝোতা স্মারক করতে হবে। যে স্মারকের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যৌথ সমন্বয়ে কাজ করবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button