সম্পাদকীয়

প্রবাসীদের প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়াতে হবে

জীবনমান উন্নয়ন এবং আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেক লোক বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন এবং উদয়াস্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির ভিতকে মজবুত করে বৈদেশিক রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন তাদের অধিকাংশই অদক্ষ শ্রমিক। এ বিদেশগামী শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে বিদেশে পাঠানো হলে তারা আরও ভালো বেতনে চাকরি লাভের সুযোগ পাবেন। দেশও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে। প্রতিবেশী ভারত বিশ্বের প্রধান রেমিট্যান্স আয়কারী দেশ। এর পরই রয়েছে চীন। এসব দেশ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ লোকজনকে বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষে অবস্থান করছে। বিদেশগামীদের অধিকাংশই অদক্ষ হওয়ায় বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকরা হাড়ভাঙা খাটনি করেও ন্যায্য বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র তৈরি করলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-কে গতিশীলতার সঙ্গে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। প্রবাসে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো ধরনের মার্কেট রিসার্চ, বাজার গবেষণা বা জরিপ আছে বলে মনে হয় না। মধ্যপ্রাচ্য বা অন্যান্য দেশে শ্রমিক পাঠানোর জন্য এমন গবেষণা জরুরি বলে আমরা মনে করি। ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন বা আইওএমের সহায়তায় যদিও বাংলাদেশে স্বল্প পরিসারে বাজার গবেষণা রয়েছে, কিন্তু যে পদ্ধতিতে গবেষণা করা হচ্ছে তা মোটেই এস্টাবলিশ্ড নয়। গবেষণা বা মার্কেট রিসার্চে যে লিঙ্কগুলো খুঁজতে হবে, তা হলোÑআগামী ১০ বছরে বা ২০ বছরে ওই দেশ কী ধরনের লোক নিয়োগ দেবে, কী ধরনের ফার্মের মাধ্যমে নিয়োগ দেবে, কীভাবে বাজারে টেন্ডার আসবে, তাদের কী ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন আছে, এগুলো নিয়ে গবেষণা ও বাজার অপারেট করা। বিশেষ করে যারা নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসছেন, তারা শুধু যে ভুক্তভোগী তা নয়, তারা গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীও। তাদের কাছ থেকেই নানা তথ্য-উপাত্ত ও ক্লু অতি সহজেই পাওয়া সম্ভব। বিশ্বব্যাপী এক্ষেত্রে প্রাইভেট সেক্টর বা মার্কেটিং এজেন্সিগুলো যেভাবে গবেষণা করে থাকে, বাংলাদেশেও সেভাবে গবেষণা করা জরুরি। বিশেষত ফিলিপাইন, নেপাল, ভারত ও কম্বোডিয়া এ ধরনের বাজার গবেষণা করে থাকে। আমাদের প্রতিবেশী ভারত যে কার্যক্রম অনুসরণ করে, তা হলো, তাদের যেসব পেশাজীবী যেসব দেশে কাজ করছে, তাদের স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে গ্রুপ তৈরি করে থাকে। সেগুলোকে তারা বলে থাকে ‘সোশ্যাল সার্ভিস’। ওই গ্রুপ তাদের খোঁজ রাখে। যখন কোনো অন্যায় ও অবিচার হয়, তখন গ্রুপ দূতাবাসকে জানিয়ে থাকে। এ রকম একটি প্রক্রিয়া আবিষ্কার না করলে দূতাবাসের পক্ষেও যথেষ্ট সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button