সার্বিক স্থিতিশীলতা থাকা প্রয়োজন

আস্থার সংকটে বিনিয়োগ
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক জটিল সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে, বিনিয়োগকারীরা দ্বিধায় আছেন, আর সাধারণ মানুষের ভোগব্যয়ও কমছে। এই অচলাবস্থার মূল কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। অর্থনীতির প্রাণশক্তি হলো আস্থা—যা বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা ও জনগণের মধ্যে ফিরিয়ে আনা ছাড়া স্থবিরতা কাটানো সম্ভব নয়। চলতি বছরের অক্টোবরে আমদানি এলসি খোলার হার ১২.১৫ শতাংশ কমেছে। এটি শুধু ডলার সংকটের প্রতিফলন নয়, বরং বিনিয়োগকারীদের দ্বিধা ও চাহিদার পতনের স্পষ্ট ইঙ্গিত। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সংকটের মূল কারণ হলো বিনিয়োগের দুরবস্থা। ব্যাংকঋণের সুদহার ক্ষেত্রবিশেষে ১৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রায় অচলাবস্থা তৈরি করেছে। তাঁদের মুনাফা যেখানে ১০–১১ শতাংশের বেশি নয়, সেখানে এত উচ্চ সুদে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কার্যত অসম্ভব। ফলে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার দাবি তুলছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি চার বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ স্তরে নেমে এসেছে—মাত্র ৬.২৯ শতাংশ। এটি নতুন বিনিয়োগের দুরবস্থারই প্রমাণ। নির্বাচনের আগে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ব্যবসায়ীরা দ্বিধান্বিত, আর সেই দ্বিধাই অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে তুলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও মনে করেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। তবে আশার আলোও আছে। ডিজিটাল ব্যাংকিং, মোবাইল ফিন্যান্স সার্ভিস ও এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন গতি আনছে। ক্ষুদ্রঋণ খাতে ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ বাড়ছে, যা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর হাতে পুঁজি পৌঁছে দিচ্ছে। কিন্তু বৃহৎ বিনিয়োগ ছাড়া এই ক্ষুদ্র সফলতা সামষ্টিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারবে না। অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে প্রথম শর্ত হলো স্থিতিশীলতা। নীতিনির্ধারকদের দ্রুত স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে হবে, যাতে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পান। নিয়ন্ত্রিত আমদানির আড়ালে অর্থপাচার বন্ধ হওয়া ইতিবাচক হলেও, নিত্যপ্রয়োজনীয় ও বিনিয়োগমুখী আমদানির প্রবাহ সচল রাখা অপরিহার্য। কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, স্বচ্ছ নীতি এবং রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক-আইনশৃঙ্খলাসহ সবধরনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।
