সম্পাদকীয়

পোলট্রি শিল্পে অস্থিরতা দূরীকরণ জরুরি

শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণে পোল্ট্রি শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। অল্প পুঁজিতে স¦ল্প জায়গায় গড়ে ওঠা এই শিল্প উন্নত আমিষের উৎস। আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও এ শিল্পের অবদান রয়েছে। অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদ খাতের মধ্যে পোল্ট্রি খাত অন্যতম একটি উপখাত। আমাদের দেশে পোল্ট্রি শিল্প আশির দশকে শুরু হলেও মূলত ২০০০ সালের পর থেকে এর বিস্তার ঘটে। পোলট্রি ও ডেইরি খাত আমাদের অর্থনীতির সম্ভাবনাময় খাত। প্রান্তিক পর্যায়ে হ্যাচারি ও খামারের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান তথা স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। দুর্ভাগ্যজনক হলো, নানা কারণে এ খাতে দুঃসময় যাচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে দেশে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি, হাঁসসহ নানা ধরনের প্রাণিসম্পদের সংখ্যা ৪৫ কোটির বেশি। গরু, মহিষ, হাঁস-মুরগিসহ প্রাণিখাদ্যের জন্য দেশে গড়ে উঠেছে ফিডমিল বা প্রাণিখাদ্য উৎপাদন কারখানা। তাতে আমদানিনির্ভর এ খাতটি এখন স্থানীয় ভুট্টার ওপর ভর করে দেশি শিল্পে পরিণত হয়েছে। খাতসংশ্লিষ্টদের তরফে জানা যায়, দেশে ফিডের বাজার এখন প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার। আবার ফিডশিল্পের চাহিদার ওপর ভর করে দেশে ভুট্টার উৎপাদনও বাড়ছে। পোলট্রি ও ডেইরি খাতের দ্রুত বিকাশ এই শিল্পকে গতিশীল করেছে। পোলট্রি খাতকে বলা হয়, ফিড কনর্ভাট টু ফুড, যা সম্পূর্ণ হয় মোট ১০ ধাপে। মোটা দাগে ৩ ধাপে অর্থাৎ ১ দিনের বাচ্চা উৎপাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা খামার, মুরগি বা ডিম উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িতদের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হয় গোটা প্রক্রিয়া। ফলে এর যে কোনো একটি চেইনে সংকট দেখা দিলে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি পায়। দেখা গেছে, গোটা প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ও জটিল ধাপ ১ দিনের বাচ্চা শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। বাকি ধাপগুলো পরিচালিত হয় প্রায় দেড় লাখ প্রান্তিক খামারি ও বাজারজাকারীদের মাধ্যমে। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মুরগি ও ডিমের দাম কমে যাওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক খামারি লোকসান করছেন। তাতে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় টিকে থাকতে ফিডমিলের দাম স্থিতিশীল রাখা গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামের প্রায় ৭০ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনো গৃহপালিত পশু পালনের সঙ্গে যুক্ত। তাদের পশু পালনের মোট খরচের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ খাদ্যের পেছনে ব্যয় হয়। ফিডমিলের উচ্চ মূল্যে তারাও বিপাকে পড়েছে। প্রাণিখাদ্যের বাজার বড় উৎপাদনকারী নারিশ পোলট্রি, এসিআই গোদরেজ, আরআরপি অ্যাগ্রো, প্যারাগন, কাজী ফার্মস, সিপি বাংলাদেশ, কোয়ালিটি, আকিজ ফিডস প্রভৃতির দখলে। এসব প্রতিষ্ঠান সংঘবদ্ধভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর ‘একচেটিয়া আধিপত্যের কারণে ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম অনেক বেশি পড়ে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রান্তিক খামারি। তাই প্রান্তিক খামারি ও তরুণ উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় ধরে রাখতে সব অংশীজনকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button