সম্পাদকীয়

সম্পদের সুষম বন্টনই দারিদ্র দূরীকরণের উপায়

দারিদ্র্য এমন একটি অবস্থা যেখানে মানুষের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা পূরণে সক্ষমতা থাকে না। এটি শুধু ব্যক্তিগত সমস্যাই নয়, বরং একটি জাতির সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়। বাংলাদেশে দারিদ্র্য একটি সাধারণ সমস্যা, যা দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দারিদ্র্য দূরীকরণ শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক কার্যক্রম নয়, এটি একটি সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া। দারিদ্র্যের পেছনে নানা সামাজিক, অর্থনৈতিক, ও প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে। দারিদ্র্যের পেছনে বিভিন্ন ধরনের কারণ থাকে যেমন, প্রতমত, অর্থনৈতিক বৈষম্য: বাংলাদেশে ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য অত্যন্ত বেশি। দেশের সম্পদ ও আয়ের একটি বড় অংশ কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত, ফলে দরিদ্র মানুষগুলো দিনে দিনে আরও দরিদ্র হয়ে পড়ছে। আয়ের এই অসম বন্টনই দারিদ্র্যের একটি প্রধান কারণ। দ্বিতীয়ত,অশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাব: অশিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের অভাব দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ। দেশের একটি বড় অংশের মানুষ এখনও সঠিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত, যার ফলে তাদের দক্ষতা বাড়ছে না। দক্ষতা বাড়াতে না পারার কারণে তারা ভালো চাকরি বা আয়ের উৎস খুঁজে পায় না, ফলে তারা দারিদ্র্যের চক্রে আবদ্ধ থেকে যায়। তৃতীয়ত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছর নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা ইত্যাদি মানুষের জীবন ও সম্পদে বড় ধরনের ধ্বংস সাধন করে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দারিদ্র্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে, কারণ দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো তাদের সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। চতুর্থ হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি: বাংলাদেশে জনসংখ্যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সম্পদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। এর ফলে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। খাদ্য, বাসস্থান ও শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষের চাহিদার তুলনায় অনেক কম থাকায় দরিদ্রতা বাড়ছে। দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করা। ধনী-গরিবের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে ধনীদের উপর বেশি কর আরোপ করে দরিদ্রদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা প্রদান করতে হবে। শিক্ষা ও কর্মসংস্থান দারিদ্র্য দূরীকরণের অন্যতম প্রধান উপায়। দেশের মানুষের শিক্ষা ও দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন শিক্ষার মানোন্নয়ন, কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এ লক্ষ্যে শিল্পায়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি এবং পূর্বাভাস ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button