সম্পাদকীয়

নিকোটিন পাউচ অনুমোদন: জনস্বাস্থ্য বনাম নীতিগত অসংগতি

জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য অনুমোদনের ঘটনায় দেশে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়ায় বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটিসহ আটটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পাবলিক হেলথ ল-ইয়ার্স নেটওয়ার্ক (পিএইচএলএন) এই উদ্যোগ নিয়েছে আদালতের নির্দেশনা, সরকারি নীতি এবং সংবিধানের মৌলিক ধারার লঙ্ঘন হিসেবে। লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য যে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা রাষ্ট্র স্বীকার করেছে। সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রকে এ ধরনের পণ্য নিষিদ্ধ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ, নিকোটিন পাউচকে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির পণ্য হিসেবে অনুমোদন দেয়নি। ২০১৬ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায়ও নির্দেশ করেছে, দেশে নতুন কোনও তামাক উৎপাদনকারীকে অনুমোদন দেওয়া যাবে না এবং বিদ্যমান কোম্পানিকে তামাক উৎপাদন থেকে অন্য শিল্পে রূপান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে নিকোটিন পাউচের অনুমোদন স্পষ্টভাবে আদালতের নির্দেশনার পরিপন্থী। এর আগে ২০২৫ সালের ১৮ মে সরকার ই-সিগারেট ও সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৩৫টি মন্ত্রণালয় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে যৌথ ঘোষণা দিয়েছিল। আইন সংশোধন খসড়াতেও নিকোটিন পণ্য নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রয়েছে। এই অবস্থায় ফিলিপ মরিসের অনুমোদন নীতিগতভাবে অসংগতি সৃষ্টি করেছে। তামাকের ক্ষতি ভয়াবহ। বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাক ব্যবহারের কারণে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। ৭০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক রোগ, যার মধ্যে তামাক প্রধান। ২০১৮ সালে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছিল ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ক্ষতিকর পণ্যের উৎপাদন ও বিপণন নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। লিগ্যাল নোটিশে দ্রুত তদন্ত করে অনুমোদন বাতিল এবং সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রের নীতি ও আদালতের নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা ছাড়া জনগণের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা সম্ভব নয়। সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং নীতি নির্ধারকদের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও জীবন ঝুঁকিতে না পড়ে। নিকোটিন পাউচ অনুমোদনের এই ঘটনায় দেশের জনস্বাস্থ্য নীতি ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। এটি শুধু একটি প্রশাসনিক অনুমোদনের বিষয় নয়; এটি রাষ্ট্রের নৈতিক দায় এবং জনগণের জীবন রক্ষার দায়িত্বের পরীক্ষা। সুনির্দিষ্ট নীতি, স্বচ্ছতা এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছাড়া দেশের জনস্বাস্থ্য নিরাপদ রাখা সম্ভব নয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button